close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সব নির্বাচনে মাঠে সেনাবাহিনী, থাকবে পূর্ণ পুলিশি ও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
In the upcoming national elections, the army will not only act as a "striking force" but will also receive police and magistracy powers. According to the Election Commission’s proposal, they..

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী আর শুধু ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ নয়, এবার তাদের দেওয়া হচ্ছে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও। ইসির প্রস্তাব অনুযায়ী সেনারা স্বাধীনভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এখন রাজনীতির মাঠে বইছে উত্তাপ। রাজনৈতিক দলগুলো একের পর এক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক—আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ—নিয়ে বড় ধরনের পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে শুধু ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে নয়, বরং পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে মাঠে নামানো হবে। এর অর্থ হলো, সেনারা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি কিংবা কোস্টগার্ডের মতো সমান ক্ষমতা ভোগ করবে। শুধু তাই নয়, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও প্রয়োগ করতে পারবে সেনা কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত বৈধতা আনতে নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।

ইসির একজন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “আমরা আরপিও সংশোধন করে সেখানে ‘ল’ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি’ হিসেবে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আগে এ তালিকায় শুধু পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বিজিবি ছিল। এখন থেকে সেনাবাহিনীও সেই তালিকায় যুক্ত হবে। প্রস্তাবটি এ সপ্তাহের মধ্যেই সরকারের কাছে পাঠানো হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের দিক থেকে আমরা রিকমেন্ড করে একটি খসড়া এই সপ্তাহের মধ্যেই পাঠিয়ে দেব। এরপর সরকার তাদের মতো করে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে, কতটা কার্যকরভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায়।”

নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে দেশের রাজনীতি ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অতীতে সেনাবাহিনী সাধারণত নির্বাচনে সহায়ক শক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে, যাদের উপস্থিতি ভোটকেন্দ্রের বাইরে শৃঙ্খলা বজায় রাখা বা হঠাৎ কোনো সহিংস পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবারের উদ্যোগে সেনারা সরাসরি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে নির্বাচনকালীন সময়ে ভোটাররা আরও বেশি নিরাপদ বোধ করবে বলে আশা প্রকাশ করছেন অনেকেই।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেনাবাহিনীকে পূর্ণ পুলিশি ও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলে জাল ভোট, বুথ দখল, নির্বাচনকেন্দ্র দখল কিংবা সহিংসতা ঠেকাতে এটি একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এ ধরনের ক্ষমতা সেনাবাহিনীকে দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। কারণ অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলো সেনাদের ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তবুও সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা, সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে তারা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও বিশ্বাস করে যে, এই উদ্যোগ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সহায়ক হবে। আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি হবে বাংলাদেশ নির্বাচন ব্যবস্থার একটি বড় ধরনের সংস্কার।

সবশেষে বলা যায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকাই হতে পারে নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি। তবে এটি কতটা সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়ার ওপর।

No comments found