স্টান্ট রাইডার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর আরএস ফাহিম দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার অভিজ্ঞতা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে লিখেছেন—সব চক্রান্ত থেকে রক্ষা করতে পারবেন কেবল আল্লাহ।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় স্টান্ট রাইডার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর আরএস ফাহিম চৌধুরী ফের আলোচনায় এসেছেন একটি দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেপ্তারের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ফাহিম এবার নিজের জীবনের কঠিন বাস্তবতা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে মুখ খুলেছেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন, আন্দোলনের সময়কার ভূমিকা, পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত হুমকি এবং নানা ষড়যন্ত্রের বিষয় খোলাসা করেন। তিনি জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে শুরু থেকেই ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আন্দোলনের সময় আহতদের সহায়তা করেছেন আর্থিকভাবে এবং নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অনলাইনে সক্রিয় থেকেছেন। কিন্তু এর পরিণতিতে তাঁকে ভুগতে হয়েছে নানা হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে।
ফাহিম লিখেছেন—“ক্যারিয়ার ও পরিবারের নিরাপত্তা ভুলে গিয়ে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু এর ফল দাঁড়াল ভিন্ন কিছু। আমাকে ‘রাজাকার’ ট্যাগ লাগানো হলো, ভূয়া মামলা দেওয়া হলো, আবার সেই মামলা মিটমাট করার জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করা হলো। টাকা না দেওয়ায় নতুন নতুনভাবে ফাঁসানোর চেষ্টাও শুরু হলো।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, অনলাইন ও অফলাইনে একাধিক পক্ষ তাঁকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। একদল মানুষ তার পূর্বেকার সম্পর্ক ও ছবি ব্যবহার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে যারা আগে ক্ষমতায় ছিল, তারা প্রশ্ন তুলছে কেন তিনি ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। তাঁদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ফাহিমকে জেলে পাঠানো, তার বাড়িতে মব হামলা চালানো কিংবা সরাসরি জীবননাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন—“আমাকে বলা হলো আমি কিশোর গ্যাং চালাই। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কেন এই ছেলেরা আমাকে এত ভালোবাসে? কেন আমি না ডাকলেও তারা আমার সঙ্গে যুক্ত হতে চায়? এটিই কি আসলে আমার অপরাধ?”
শেষ অংশে ফাহিম তার জীবনের অনিশ্চয়তা ও ভয় নিয়ে খোলামেলা স্বীকারোক্তি দেন। তিনি লিখেছেন—“কপালে কী আছে জানি না, কী হতে যাচ্ছে সেটাও জানি না। তবে বিশ্বাস করি, সব কালো চক্রান্ত ও ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার মালিক কেবল আল্লাহ। ইনশাআল্লাহ আমি হারব না। আপনাদের ভালোবাসাই আমাকে রক্ষা করবে।”
উল্লেখ্য, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জন্ম নেওয়া আরএস ফাহিম বেড়ে উঠেছেন রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়। সাইকেল স্টান্ট ভিডিওর মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়। ২০১৫ সালে ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় স্টান্ট রাইডার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে। বর্তমানে তিনি লাখো তরুণ ভক্তদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এই বক্তব্য প্রকাশের পর নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে ফাহিমের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ কেউ তার বক্তব্য নিয়ে নতুন বিতর্কও তুলেছেন। তবে ফাহিমের কথায় স্পষ্ট, সব দ্বন্দ্ব-ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও তিনি মানুষের ভালোবাসায় দৃঢ় থেকে সামনে এগিয়ে যেতে চান।