close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সাতক্ষীরায় অবৈধ ইট ভাটা: ৪০ হাজার টাকা জরিমানা

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা avatar   
সাতক্ষীরার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধকরণে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভাটাটি পরিচালণা করে আসা ব্র..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা :

সাতক্ষীরা মহামান্য হাইকোর্ট, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ২ যুগের বেশি সময় পরিচালিত গ্রামের মধ্যে, জনবসতি ও কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ ব্রাদার্স ব্রিকস্ ওরফে সায়েম ব্রিকসে্র কথিত লীজ মালিক রিনা পারভীনের স্বামী প্রবাসী আব্দুস সবুরের নিকট থেকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং অবৈধ ইট ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (২৪ মে '২৫) দুপুর ১২ টার দিকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে নীলডুমুর অবস্থিত ১৭ বিজিবির মেজর সুস্মিত শোভন দাস এবং থানার উপ-পরিদর্শক রাজীব সহ পুলিশ বাহিনী, বিজিবির যৌথ বাহিনীর সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করেন। 

অভিযানের সময় ব্রাদার্স ব্রিকস্ ওরফে সিয়াম ব্রিকসে্ যেয়ে ভাটা কর্তৃপক্ষের কাউকে না পেয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। এক ঘন্টা দেরিতে ব্রাদারস ব্রিকসে্র মালিকের ভাই আব্দুস সেলিম ও লিজ হোল্ডার রিনা পারভীনের স্বামী আব্দুস সবুর দলবল ও ক্যাডার বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের সদস্যদের উপরে চড়াও  হয়ে হুমকী  দিয়ে সরকারি কাজে বাধা দেয়। 

ঐ সময় শাহাজান আলী নামে এক বিএনপি নেতাকে আটক করতে গেলে উপায়ান্তর না পেয়ে মুচলেকা দিয়ে রেহাই পেলেও  ব্রাদার্স ব্রিকস্ ওরফে লীজ মালিক সিয়াম ব্রিকসে্র মালিক রিনা পারভিনকে না ধরে হুমকিদাতা তার স্বামী আব্দুস সবুরকে আটক করে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা থানায় নিয়ে যায়। 

সেখানে যেয়ে  রহস্যজনক কারণে কথিত সায়েম ব্রিকসে্র মালিকের স্বামী আব্দুস সবুরের নিকট থেকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

অভিযানের সময় ব্রাদার্স ব্রিকস্ ওরফে সায়েম ব্রিকসে্র সকল কার্যক্রম ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে মেশিন যন্ত্রপাতি জব্দ করে নিয়ে যায় ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃপক্ষ। 

লিজ নেওয়া কথিত সায়েম ব্রিকসে্র মালিকের স্বামী আব্দুস সবুর উপজেলার গণপতি গ্রামের আব্দুস সামাদের পুত্র হলেও ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার বাড়ি মৌতলা গ্রামে দেখানো হয়েছে। বসন্তপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে বাবলু সরকারি কিছু খাস জমি লিজ নিয়ে শীতলপুর গ্রামে কৃষি জমি এবং জনবসতি এলাকায় ২০০১ সাল হতে ব্রাদার্স ব্রিকস্ নামে ইট ভাটাটি পরিচালনা করে আসলেও আজও পর্যন্ত তার কোন পরিবেশ ছাড়পত্র সহ ইট ভাটার বৈধ কোন কাগজপত্র নাই। 

একেবারে গ্রামের মধ্যে জনবসতি এলাকায় ভাটাটি গড়ে ওঠায় এলাকার অধিকাংশ নারী-পুরুষ শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে ভুগছিল। 

ভাটাটি বন্ধের জন্য এলাকাবাসী একাধিকবার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর সহ মহামান্য হাইকোর্টে রিট করলেও মোটা অংকের টাকা ও খুটির জোরে ঠিকই ভাটার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে লোক দেখানো ভ্রাম্যমান আদালত এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনা করে সাময়িক বন্ধ করে সিলগালা করলেও পরবর্তীতে পাল্টা একটি রিট করে বছরের পর বছর এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসায় স্থানীয় জনসাধারণের ভোগান্তির কোন শেষ নাই। 

ব্রাদার্স ব্রিকসের মালিক আব্দুল ওদুদ বাবলু এবং তার ভাই আব্দুস সেলিম এবং শামসুল আলম কায়েস মিলে এলাকার শত শত লোকের নিকট থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ইট দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। 
এ প্রেক্ষিতে ভাটাটি সৌদি প্রবাসী আবদুস সবুরের নিকট বছরে ২৫ লক্ষ টাকা হারি চুক্তিতে লিজ দেওয়া হয়। আব্দুস সবুর সৌদি প্রবাসী হওয়ায় তার স্ত্রী রিনা খাতুনের নামে লিজ গ্রহীতা হিসাবে দেখানো হয়। ওই সময় থেকে আব্দুর সবুরের শিশু পুত্র সায়েমের নামে ভাটাটি সায়েম ব্রিকস্ নামে পরিচালিত হয়ে আসছে।

এ খবর জানতে পেরে গ্রাহকরা পাওনা ইট এবং টাকার দাবিতে থানা ঘেরাও করা সহ নানান বিচার সালিশ এখনো চলমান থাকলেও বহু গ্রাহকের টাকা ও ইট আজও বুঝে পাইনি বলে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান।

কোন প্রকার লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাগজ না থাকার পরেও রহস্যজনক ভাবে বহাল তবিয়াদে ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই। গত কিছুদিন আগেও এই ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দিলেও কয়দিন পরে আবারো ঠিকই রহস্য ঘেরা ভাটাটি পরিচালিত হয়ে আসছে।

শনিবার ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিজিবি ও পুলিশ কর্মকর্তার সামনে সরকারি কাজে বাধা, হুমকি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাকে আটক করে থানায়  মামলা দায়েরের জন্য নিয়ে গেলেও ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়ায় জনমনে টাকাই যখন রক্ষক আইন তখন ভক্ষক এরকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। 

কথিত সায়েম ভাটা মালিকের স্বামীকে আটক করে থানায় নিয়ে মামলা না দিয়ে জরিমানায় ছাড়ার বিষয়টির সত্যতা জানার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাসের নিকট একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি পরবর্তীতে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

তবে তার অফিসের নাজির সরোয়ারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন বাদি না পাওয়ায়  ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান। অভিযান পরিচালনার সময় আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং যৌথ বাহিনীর সদস্যদের কাজে বাঁধা দেওয়া এবং হুমকির ঘটনায় বাদী কে হবে? এ প্রশ্ন এখন জনমনে।

Nenhum comentário encontrado