গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যায় বিএনপিকে জড়িয়ে অপপ্রচারের অভিযোগে এনসিপি নেতা সারজিস আলমের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন আইনি ও রাজনৈতিক বিতর্ক। এই ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজ। মামলার আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, সাংবাদিক তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় একটি অপরাধী চক্রের ভিডিও ধারণ করার কারণে। এই ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণভাবে একটি অপরাধ চক্রের পরিকল্পিত হামলা। কিন্তু ঘটনার সঠিক তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই, এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম নিজের ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট দিয়ে বিএনপিকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে প্রচার চালান।
তানভীর সিরাজের দাবি, এই পোস্টগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এসব বক্তব্য সত্যের ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, "অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে, সারজিস আলম ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রঙ দিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। এর ফলে বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে দলের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।"
মামলায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে, যা দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট ও রাজনৈতিক ক্ষতির জন্য আর্থিক প্রতিকার হিসেবে চাওয়া হয়েছে। আদালত প্রাথমিক শুনানি শেষে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এখন পুলিশের দায়িত্ব হবে সারজিস আলমের পোস্টগুলো সংগ্রহ করা, সেগুলোর প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখা এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা।
রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাটি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিএনপি নেতাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রবণতা বাড়িয়ে তুলেছে। অপরদিকে, এনসিপি নেতারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানহানির মামলায় প্রমাণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রমাণিত হয় যে সারজিস আলমের মন্তব্যগুলো অসত্য এবং ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে গুরুতর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে, অভিযুক্ত পক্ষ প্রমাণ করতে পারলে যে মন্তব্যগুলো জনস্বার্থে বা সত্যের ভিত্তিতে করা হয়েছিল, তাহলে মামলাটি খারিজও হতে পারে।
এদিকে, সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের তদন্তও চলছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, ঘটনার দিন তুহিন একটি অপরাধী চক্রের বেআইনি কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করেছিলেন, যা সম্ভবত তার হত্যার মূল কারণ। পুলিশের তদন্ত শেষ হলে এই হত্যাকাণ্ড ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা আরও স্পষ্ট হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা শুধু একটি মানহানির মামলা নয়; বরং এটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন, যেখানে সামাজিক মাধ্যম রাজনৈতিক প্রচারণা ও পাল্টা প্রচারণার অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠেছে।