সাংবাদিক তুহিন হত্যায় বিএনপিকে জড়িয়ে অপপ্রচার করার অভিযোগে এনসিপি নেতা সারজিস আলমের বিরুদ্ধে গাজীপুর আদালতে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা হয়েছে। আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
গাজীপুরে আলোচিত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা সারজিস আলমের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেছেন বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজ।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন তানভীর সিরাজ। মামলার আবেদনটি শুনানি শেষে আদালত গ্রহণ করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা—সিআইডিকে বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দেন।
গাজীপুর জজ আদালতের আইনজীবী সিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, আদালত প্রাথমিকভাবে অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে মামলাটি গ্রহণ করেছেন। এখন সিআইডি পুরো বিষয়টি তদন্ত করবে এবং তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবে।
বিএনপি নেতা তানভীর সিরাজ মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, গত ৭ আগস্ট সাংবাদিক তুহিন হত্যার পর এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, গাজীপুরে এক বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি নিয়ে নিউজ করায় দুপুরে আনোয়ার নামের এক সাংবাদিককে বিএনপির কর্মীরা ইট দিয়ে আঘাত করে এবং একই দিন রাতে চৌরাস্তায় চা দোকানে সাংবাদিক তুহিনকে ‘চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা’ হত্যা করেছে।
তানভীর সিরাজের অভিযোগ, সারজিস আলম তথ্য যাচাই না করেই এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ করেছেন, যা শুধু বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেনি, বরং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
এরই মধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, অপরাধী চক্রের কার্যক্রম রেকর্ড করায় তুহিনকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়।
তানভীর সিরাজ বলেন, “আমরা সবসময় সত্য প্রকাশের পক্ষপাতী। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় করার জন্য মিথ্যা তথ্য ছড়ানো গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিপন্থী। দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমি মানহানির মামলা করেছি এবং ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করছি।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সারজিস আলম তাঁর ফেসবুক পোস্টটি পরদিন সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে সম্পাদনা করেন এবং সেখানে ‘চাঁদাবাজ’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ছিনতাইকারী’ শব্দ ব্যবহার করেন। যদিও এই সম্পাদনাও মূল অভিযোগের গুরুত্ব কমাতে পারেনি, কারণ ইতোমধ্যেই প্রথম পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় গাজীপুরের রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা একে পরিকল্পিত রাজনৈতিক অপপ্রচার হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন, অন্যদিকে এনসিপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় অঙ্কের দাবি। যদি আদালত অভিযোগ প্রমাণিত বলে মনে করে, তবে এটি ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো ব্যক্তিদের জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বর্তমানে সিআইডি মামলাটির তদন্ত শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তদন্তে ডিজিটাল ফরেনসিক টিম সারজিস আলমের মূল পোস্ট, সম্পাদিত সংস্করণ, শেয়ার ও কমেন্টের সংখ্যা, এবং সেগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণ করবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি, তদন্ত কর্মকর্তারা সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে পোস্টের তথ্যের কোনো সম্পর্ক ছিল কি না, তা বিস্তারিত যাচাই করবেন।
রাজনৈতিক অঙ্গন, গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষ এখন নজর রাখছে—এই মামলার মাধ্যমে কত দ্রুত এবং কতটা নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।