গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে মূল আসামি স্বাধীন। এ ঘটনায় মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব।
গাজীপুরে আলোচিত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যা মামলায় বড় ধরনের অগ্রগতি এসেছে। শনিবার সকালে র্যাবের এক জরুরি ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অন্যতম আসামি স্বাধীন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। স্বাধীন পেশায় গাড়ির ড্রাইভার হলেও দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সঙ্গে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন বলে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীন প্রায় ৯ থেকে ১০ বছর ধরে গাজীপুর এলাকায় বসবাস করছেন। এ সময়ের মধ্যে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং চাঁদাবাজি, মারামারি ও বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন। তদন্তে জানা গেছে, সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে স্বাধীন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
অন্যদিকে, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত পরিচালিত বিশেষ অভিযানে মহানগরের বিভিন্ন এলাকা এবং বাইরের জেলা থেকে মোট ছয়জনকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন— কেটু মিজান ও তার স্ত্রী গোলাপী বেগম, ভবানীপুরের উত্তরা এলাকা থেকে সুমন, হোতাপাড়া থেকে আলআমিন, ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে স্বাধীন ও শাহ জালাল, এবং মহানগরের চান্না এলাকা থেকে ফয়সাল হাসান।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে স্বাধীন ও কেটু মিজানের মধ্যে হত্যার আগের দিন একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছিল, যা তদন্তে নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাসান জামালের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে পরিবারসহ চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস করছিলেন তুহিন। সহকর্মীরা জানান, তিনি পেশাদার সাংবাদিকতার পাশাপাশি দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবেদন করার জন্য পরিচিত ছিলেন।
স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ ও বাসিন্দারা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। তারা বলেন, একজন নির্ভীক সাংবাদিককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর ভয়ংকর আঘাত। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পুলিশ ও র্যাবের যৌথ তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আশা করছে, খুব শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল কারণ এবং সব দায়ীদের সম্পূর্ণ চিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। এদিকে তুহিনের পরিবারের সদস্যরা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।