সাকিব-হিরুর ব্যাংক হিসাব স্থগিত চেয়ে দুদকে বিএসইসির চিঠি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Following a BSEC investigation, serious allegations of fraud and irregularities against Al-Amin Chemical Industries PLC have led to a request to freeze bank accounts of four individuals and four compa..

বিএসইসির তদন্তে আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসিকে ঘিরে জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার ব্যক্তি ও চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে দুদকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত সাকিব আল হাসান ও আলোচিত বিনিয়োগকারী হিরুর প্রতিষ্ঠানও তদন্তের আওতায় এসেছে।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসিকে ঘিরে করা অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজন ব্যক্তি ও চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সম্প্রতি বিএসইসি থেকে পাঠানো এ চিঠি দুদক চেয়ারম্যান ও এক কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাঠানো হয়। এতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসিকে ঘিরে তদন্তে মিথ্যা তথ্য প্রদান, জাল-জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে উল্লেখযোগ্য শেয়ারের মালিকানা গ্রহণের মতো গুরুতর অনিয়ম ধরা পড়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর সহযোগিতায় সপ্তমবারের মতো ব্যাংক হিসাব স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে।

যাদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে তারা হলেন— কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম শিকদার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুন্সী সফি উদ্দিন, প্রাক্তন পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর এবং পরিচালক (অব.) মোহাম্মদ খায়রুল বাশার।

এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে—

  • লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (মুন্সী সফি উদ্দিন ও মো. হুমায়ুন কবীরের মালিকানাধীন),

  • মোনার্ক মার্ট লিমিটেড (সাকিব আল হাসানের মালিকানাধীন),

  • মোনার্ক এক্সপ্রেস লিমিটেড (সাকিব আল হাসানের মালিকানাধীন),

  • ইশাল কমিউনিকেশন লিমিটেড (আমিনুল ইসলাম শিকদার ও মোহাম্মদ খায়রুল বাশারের মালিকানাধীন)।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৮.১৭৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরু ও তাদের সহযোগীরা। সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আশিক ১৮.৪০ শতাংশ, সাবেক এমডি সৈয়দ আতিকা ১৫.৯৭৫ শতাংশ এবং সাবেক পরিচালক তাজাক্কা তানজিম ১৩.৮০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেন সাকিব-হিরু ঘনিষ্ঠদের কাছে।

এর মধ্যে সাকিবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট ২.৪০ শতাংশ এবং মোনার্ক এক্সপ্রেস ৪.৮০ শতাংশ শেয়ার কিনেছে। ইশাল কমিউনিকেশনের প্রতিনিধিত্বে আমিনুল ইসলাম শিকদার ও খায়রুল বাশার কিনেছেন ১৪.৪ শতাংশ। এএফএম রফিকুজ্জামান ১০ শতাংশ, মাসুক আলম ৬ শতাংশ, হুমায়ুন কবীর (লাভা ইলেকট্রোডসের মাধ্যমে) ২.৪০ শতাংশ এবং মুন্সী সফি উদ্দিন ৮.১৭৫ শতাংশ শেয়ার নিয়েছেন।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজ হলো আলোচিত বিনিয়োগকারী ও সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের হিরুর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে মোনার্ক মার্ট ও মোনার্ক এক্সপ্রেস সরাসরি সাকিব আল হাসানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেখানে জাভেদ এ মতিনও অংশীদার হিসেবে যুক্ত আছেন।

পুঁজিবাজারের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, যখন বিএসইসি ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট বাতিল করে। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, এসব কোম্পানিকে আর্থিক সক্ষমতা ও সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তর করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৫০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২.৫৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৭.৪৬ শতাংশ রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাকিব-হিরুর মালিকানাধীন কোম্পানি নিয়ে এই তদন্ত ও ব্যাংক হিসাব স্থগিতের পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোড়ন তুলতে পারে। কারণ পুঁজিবাজারে বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্রিকেট সুপারস্টার সাকিব আল হাসানের নাম জড়িয়ে গেলে সেটি সরাসরি বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এখন সবার নজর দুদকের দিকে—তারা কী পদক্ষেপ নেয় এবং এই তদন্ত থেকে শেষ পর্যন্ত কী পরিণতি আসে, তা নিয়েই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জোর আলোচনা চলছে।

No comments found