বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের ফেরার ক্ষীণ আশাটুকুও শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। একটি ফেসবুক পোস্টেই নষ্ট হলো তার সম্ভাবনা।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও প্রভাবশালী ক্রিকেটারদের তালিকা করলে সবার আগে উঠে আসবে সাকিব আল হাসানের নাম। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে উজ্জ্বল করেছেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সাম্প্রতিক সামাজিক কার্যকলাপের কারণে তার জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে যে আশা তৈরি হয়েছিল, তা এখন একেবারেই শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) শুরু থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছিল সাকিবকে আবার দলে ফেরানোর জন্য। সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজন, মোহাম্মদ রফিক থেকে শুরু করে জাতীয় দলের অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার গণমাধ্যমে বলেছেন, সাকিবের অভিজ্ঞতা ও অবদান এখনো বাংলাদেশ দলের জন্য অপরিহার্য। বোর্ডের সর্বোচ্চ পর্যায়েও এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এমনকি বিসিবির সভাপতি থাকাকালীন ফারুক আহমেদ সরাসরি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সাকিবকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে।
পরবর্তীতে বিসিবির দায়িত্ব নেওয়া আমিনুল ইসলাম বুলবুলও একই বার্তা দেন। আর খালেদ মাহমুদ সুজন বারবার বলেছেন— সাকিবের রাজনৈতিক অবস্থান ও বিতর্কিত মন্তব্যের বাইরে গিয়ে তার ১৭ বছরের অবদান বিবেচনা করা উচিত।
কিন্তু সবকিছুতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো ১৫ আগস্টের একটি ফেসবুক পোস্ট। সেদিন জাতীয় শোক দিবসে সাকিব তার অফিসিয়াল পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। পোস্টটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের নিহত সদস্যদের ছবি ছিল। সঙ্গে লিখেছিলেন, “শ্রদ্ধাঞ্জলি শহীদ পরিবারের প্রতি।
এই একটি পোস্টই বদলে দিল সব হিসাব। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন এক অবস্থায় আছে যে, সাকিবের এই প্রকাশ্য অবস্থান তার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে নতুন সরকারের সঙ্গে। ফলে তার দেশে ফেরার ক্ষীণ সম্ভাবনাটুকুও উবে গেল কি না, তা নিয়েই এখন তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে দেশের ক্রীড়া মহলে।
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাকিবকে আর কোনোভাবেই সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। তারা মনে করছে, সাকিব নিজেই নিজের সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছেন। একজন কর্মকর্তার ভাষায়— “২০২৪ পরবর্তী যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা আর কোনোভাবেই এই সরকারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। সাধারণ মানুষের উপলব্ধিও এখন ভিন্ন।
আরেক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন— “সাকিবের জন্য যতটুকু সুযোগ ছিল, তিনি তা নিজেই নষ্ট করেছেন। এখন তাকে সাহায্য করার কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় দলে ফেরার দরজা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটি নিঃসন্দেহে বড় এক আঘাত। কারণ মাঠে সাকিব এখনো কার্যকরী, তার পারফরম্যান্স ও অভিজ্ঞতা দলের জন্য সম্পদ হতে পারত। কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সাকিব সেই সম্ভাবনাকে নিজের হাতেই নষ্ট করে ফেললেন বলে মনে করছেন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল মহল।
তবে ক্রিকেট মহলের একাংশ এখনো আশা ছাড়েনি। তাদের মতে, দেশের প্রয়োজনে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। কিন্তু আপাতত বাস্তবতা হলো— সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা আর নেই।