বুধবার দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে যায় দুদকের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল। পরিদর্শন শেষে দুদকের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাত সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাথর লুটপাট চললেও স্থানীয় প্রশাসন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেনি।
তিনি বলেন, “এটা মূলত স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নিলে এত বড় ক্ষতি হতো না। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোরও আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখা উচিত ছিল।”
দুদক কর্মকর্তা জানান, কয়েকশ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হয়ে গেছে, যা শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ক্ষতিই নয়, পর্যটনের দিক থেকেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, “যেসব পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন, তারা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন ধ্বংসের মুখে।”
লুটের পেছনে কারা জড়িত—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এলাকায় বহু স্টোন ক্রাশার মেশিন রয়েছে। সেখানেই লুটে নেওয়া পাথর ভাঙা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পাশাপাশি বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততার বিষয়েও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, আজকের পরিদর্শনের প্রতিবেদন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং সেখান থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদক এই ঘটনার পেছনে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, প্রায় এক বছর ধরে সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুট চললেও, গত ১৫ দিন তা ভয়াবহ রূপ নেয়। এতটাই পাথর তোলা হয়েছে যে পুরো এলাকা এখন প্রায় মরুভূমির মতো দেখতে। স্থানীয়রা বলছেন, নদী তীরের বালু ও মাটিও তুলে নেওয়া হয়েছে।
লুটের ঘটনা ঘটার পরেই দুদকের অভিযান শুরু হওয়ায় অনেকের প্রশ্ন—এতো দেরিতে পদক্ষেপ কেন? এর জবাবে দুদক কর্মকর্তা জানান, তারা প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি জনবল সংকট ও দূরত্বজনিত সমস্যার কথাও উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা নিয়মিত টহল ও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের মাহমুদ আদনান বলেন, “ঘটনার খবর পেলেই ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ টিম অভিযান চালায়। পুলিশও সহায়তা করে। নিয়মিত টহলও চলছে।”
লুটপাটের বিষয়ে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে সাদাপাথরে শুরু হয় লাগামহীন পাথর উত্তোলন। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সীমিত সময়ের তৎপরতার পর কিছুদিন লুট বন্ধ থাকলেও, সম্প্রতি সেটি ফের ভয়াবহ রূপ নেয়।
সবচেয়ে বিতর্কিত দিক হলো—এই লুটপাটে একাধিক রাজনৈতিক নেতার নাম উঠে আসা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনএর বিরুদ্ধে লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে কেন্দ্রীয় বিএনপি ইতোমধ্যে তাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে। স্থানীয় বিএনপির আরও কিছু নেতা এবং জেলা-মহানগরের একাধিক প্রভাবশালী নেতার নামও আলোচনায় রয়েছে।
close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
コメントがありません