সিলেটের ভোলাগঞ্জে সরকারি গেজেটভুক্ত কোয়ারি থেকে কোটি টাকার সাদা পাথর লুটের ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় দুই হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিলেটের ভোলাগঞ্জ এলাকা আবারও আলোচনায় এসেছে সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনায়। কোটি টাকার সমমূল্যের এসব মূল্যবান খনিজ অবৈধভাবে তুলে নেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার রাতের অভিযানে পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান শনিবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, পাথর লুটপাটের ঘটনায় শুধু ৫ জনকেই নয়, বরং বিশাল সংখ্যক লোক জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। সেই কারণে অজ্ঞাতনামা দুই হাজার জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হিসেবে রয়েছেন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হাবীব।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে দুষ্কৃতকারীরা সরকারি গেজেটভুক্ত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সাদা পাথর লুট করছে। এসব পাথরের বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি। যদিও ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে কারা জড়িত, তাদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় এখনও প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর কোয়ারি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার। এখানে উৎপাদিত পাথর নির্মাণ শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও অসাধু চক্র কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচারের সঙ্গে যুক্ত। এর ফলে রাষ্ট্র কেবল কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে না, বরং পরিবেশ ও ভৌগোলিক কাঠামোর ওপরও তৈরি হচ্ছে মারাত্মক হুমকি।
মামলার এজাহারে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সরকারি গেজেটভুক্ত কোয়ারি থেকে এ ধরনের অবৈধ লুটপাট খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২-এর ধারা ৪(২)(ঞ) এবং খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২-এর বিধি ৯৩(১)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৩৭৯ ও ৪৩১ ধারার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যা আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ।
আইনজীবীদের মতে, এ ধরনের অপরাধের শাস্তি কঠোর। কারণ এখানে শুধু সাধারণ চুরিই হয়নি, বরং রাষ্ট্রের সম্পদ লুট হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, আটক পাঁচজনকে আদালতে পাঠানো হবে এবং মামলার তদন্তের মাধ্যমে আসল হোতাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
কোম্পানীগঞ্জসহ পুরো ভোলাগঞ্জ এলাকায় এই ঘটনার পর চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই এখানে প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় পাথর লুটপাট চলছে। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও মূল হোতারা থেকে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এবার যদি সরকার দৃঢ় অবস্থান নেয়, তবে এই চক্রকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন।
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, খনিজ সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত নজরদারি বাড়াতে হবে। নতুবা সিলেট অঞ্চলের ভোলাগঞ্জসহ বিভিন্ন কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে খনিজ সম্পদ পাচার অব্যাহত থাকবে, যার ফলে রাষ্ট্রের অমূল্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে।