শেয়ার, ব্যাংক হিসাব ও গাড়িসহ প্রায় ২৪ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে আদালত। সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নামে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদ অবরুদ্ধ করেছে আদালত। মোট ১২টি কোম্পানির শেয়ার, ৯টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য ২৪ কোটি ৩১ লাখ ৭১ হাজার ২৩৬ টাকা বলে জানানো হয়েছে।
৮ জুলাই (মঙ্গলবার) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন। শুধু সম্পদ জব্দই নয়, একই সঙ্গে গোলাম দস্তগীর গাজী এবং তার স্ত্রী হাসিনা গাজীর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. জুলফিকার আদালতে এই আবেদন করেন। তিনি জানান, গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটি মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তে জানা যায়, তিনি অবৈধ ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব সম্পদ হয়তো গোপনে অন্যত্র স্থানান্তর বা বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেই কারণে এই আদেশ চাওয়া হয়।
আবেদনে আরো বলা হয়, আসামির নিজের নামে এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা বিভিন্ন বিনিয়োগ, ব্যাংক ব্যালেন্স ও গাড়ি জব্দ না করলে তদন্ত বিঘ্নিত হতে পারে এবং রাষ্ট্রের অর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
এর আগে গত ৫ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার স্ত্রী হাসিনা গাজীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, গোলাম দস্তগীর গাজীর নামে ৪৪৮ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ২৩ কোটি ৫১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮০ টাকা জ্ঞাত আয়ের বাইরে অর্জিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
দুদক জানায়, এসব সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন গাজী ও তার স্ত্রী। এ ছাড়া তদন্তে আরও নতুন সম্পদের তথ্যও বেরিয়ে এসেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার এবং ব্যাঙ্ক একাউন্টে জমাকৃত অর্থ।
এ মামলায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং সম্পদের উৎস, লেনদেন এবং গোপন তথ্য বিশ্লেষণ করতে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশে এখন এসব সম্পদ আর গাজী পরিবার স্থানান্তর বা বিক্রয় করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, গোলাম দস্তগীর গাজী দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে। তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি এখন দেশের আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
নাগরিক সমাজ ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, দুর্নীতি দমনে এ ধরনের পদক্ষেপ আরও জোরদার করতে হবে, যাতে করে প্রভাবশালীরাও আইনের বাইরে না থাকতে পারে।