রাজধানীর লালবাগ থানার শাওন সিকদার হত্যা ও আশরাফুল হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে আদালতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আদালতের আদেশে তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে রাজধানীর লালবাগ থানার আলোচিত দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই দুটি মামলার একটি হলো ইলেকট্রেশিয়ান শাওন সিকদার হত্যা মামলা এবং অপরটি হলো মো. আশরাফুল ওরফে ফাহিম হত্যাচেষ্টা মামলা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা আনিসুল হককে উভয় মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানান। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম আবেদন মঞ্জুর করেন এবং তাকে ফের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই আজিমপুর এলাকায় বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন ইলেকট্রেশিয়ান শাওন সিকদার। ইডেন মহিলা কলেজের সামনে পৌঁছালে আসামিদের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নাম উঠে আসে পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতা হিসেবে।
অন্য মামলাটিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আজিমপুর সরকারি কলোনির ভেতরে মিছিলে অংশ নেন ভুক্তভোগী আশরাফুল ওরফে ফাহিম। হঠাৎ আসামিদের ছোড়া গুলিতে তার বাম চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যান তিনি। পরে ১৭ জুলাই আশরাফুল নিজেই লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। তাতে আনিসুল হকের নামও উঠে আসে অন্যতম প্রভাবশালী আসামি হিসেবে।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নকালে সদরঘাট থেকে আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আদালতের নির্দেশে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হলেও সোমবার নতুন দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এভাবে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের মামলায় তদন্ত এগিয়ে নিতে গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজনীয় ছিল। অপরদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাবেক আইনমন্ত্রীর মতো প্রভাবশালী একজন ব্যক্তিকে একের পর এক মামলায় অভিযুক্ত হওয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
বর্তমানে আনিসুল হক কারাগারে রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।