আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে খেলাফত মজলিস। দলটির সমাবেশে নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার দাবিও জোরালোভাবে তোলা হয়।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের সবকটি ৩৩ আসনে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে খেলাফত মজলিস। শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত উলামা-মাশায়েখ ও সুধী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চল বরাবরই পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের প্রথম নিশানা। তাই এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তিনি জানান, খেলাফত মজলিস রংপুর অঞ্চলে নতুন নতুন ভারীশিল্প স্থাপন, রংপুর মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় মানে উন্নীত করা, একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং রংপুর থেকে বলাশ ঘাট হয়ে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি আলাপনগর ট্রেন চালুর দাবিকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই প্রার্থী দিয়েছে।
এসময় তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ যাতে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং রাষ্ট্রের মূলধারায় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে, সে জন্যই খেলাফত মজলিস বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হয়ে দাঁড়াতে চায়।
প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দলের পক্ষ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল— গত ১৭ বছরে সংঘটিত খুন-গুমসহ সব ধরনের রাজনৈতিক নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, প্রশাসনিক সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ রাখা, অবৈধ অস্ত্র ও অর্থের প্রভাব থেকে নির্বাচন মুক্ত রাখা এবং সর্বস্তরে সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি এসব দাবি মানা না হয়, তবে জনগণের আস্থা হারাবে নির্বাচন ব্যবস্থা এবং দেশ আবারও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও রংপুর জোন পরিচালক মাওলানা আবু সাইয়্যেদ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাস্টার সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান, রংপুর জোন সহকারী পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম গোলাম আজম, অধ্যাপক তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজুসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ঘোষণা দেন, রংপুরের ৩৩ আসন থেকে খেলাফত মজলিস শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং জনগণের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। তারা আরও বলেন, মানুষ আর আগের মতো প্রতারণার রাজনীতি চায় না, বরং উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকার নেতৃত্ব দেখতে চায়।
এই ঘোষণার মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে আসন্ন নির্বাচনের রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বেড়ে গেল। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, খেলাফত মজলিসের সক্রিয় অংশগ্রহণ রংপুরের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখন দেখার বিষয়—দলের এই ঘোষণার প্রভাব আগামী নির্বাচনের মাঠে কতটা পড়ে এবং জনগণ তাদের কতটা সমর্থন দেয়।