বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে জটিল অনুমতি প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে জরুরি ডি-রেগুলেশন করতে হবে, নইলে অর্থনীতি ঠিক হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে উদ্যোক্তাদের অযথা জটিলতার মুখে পড়তে হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, “একটি রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স পেতে ব্যবসায়ীকে ১৯টি আলাদা অনুমতি নিতে হয়।” তার প্রশ্ন, “এভাবে বাধা দিয়ে দেশে বিনিয়োগ আসবে কীভাবে?” তিনি মনে করেন, এই অতিরিক্ত প্রশাসনিক জটিলতা দূর না করলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়বে না এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে না।
রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সংলাপের মূল বিষয় ছিল, বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ ও তার সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন।
আমীর খসরু স্পষ্টভাবে বলেন, “সিরিয়াস ডি-রেগুলেশন ছাড়া বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব নয়। বিনিয়োগকারীরা এমন একটি দেশে আসতে চায় যেখানে ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়া সহজ, দ্রুত এবং স্বচ্ছ। অথচ আমাদের এখানে একটি রেস্টুরেন্ট খুলতেও উদ্যোক্তাদের প্রায় দুই ডজন সংস্থার অনুমতির জন্য সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়।”
তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার দিকেও জোর দেন। তার মতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবারও গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যাচ্ছে। যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, “যারা মানিলন্ডারিং করেছে, তারা ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যারা দেশে আছে, তাদের হাতে এখন টাকা নেই। নতুন করে মানিলন্ডারিং করার মতো পরিস্থিতিও নেই, তাই স্বাভাবিকভাবেই এ কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে।”
দুর্নীতি রোধে প্রযুক্তির ব্যবহারকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। কাগজপত্রের বদলে অনলাইন অনুমোদন, ই-পেমেন্ট এবং স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।”
বিএনপির এ নেতা আশ্বাস দেন, জনগণের ভোটে তাদের দল ক্ষমতায় এলে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ধৈর্য সীমিত। তাই আমরা ক্ষমতায় গেলে দেরি না করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করব। প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে।”
তার বক্তব্যে পরিষ্কার ছিল—বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হলে শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই নয়, বরং অর্থনৈতিক নীতিমালা সহজ করতে হবে। অযথা কাগজপত্র ও অনুমতির বোঝা কমিয়ে আনা এবং প্রযুক্তি নির্ভর স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।