গবেষণার ফলাফল-
৪,৩১৮ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ঘুমানোর আগে রিলস বা শর্ট ভিডিও দেখেন, তাদের মধ্যে রক্তচাপ বৃদ্ধির প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ স্মার্টফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (Blue Light)। এই আলো মস্তিষ্কে মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। মেলাটোনিন ঘুমের সময় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, আর এর অভাব ঘুমের ঘাটতি তৈরি করে, যা সরাসরি উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
কেন রাত জেগে রিলস দেখা বেশি ক্ষতিকর?
স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও দেখতে গিয়ে ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। গবেষকরা কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করেছেন—
1. টানা স্ক্রলিং অভ্যাস – রিলসের মতো কনটেন্ট আকর্ষণীয় এবং সংক্ষিপ্ত হওয়ায় একবার দেখা শুরু করলে থামা কঠিন হয়ে যায়। ফলে ঘুমের সময় পিছিয়ে যায়।
2. মানসিক চাপ বৃদ্ধি – রিলসের বিষয়বস্তু বিভিন্ন রকমের হয়- বিনোদনমূলক, ভয়ঙ্কর, উত্তেজনাপূর্ণ বা দুঃখজনক। এগুলো আমাদের আবেগের ওপর প্রভাব ফেলে এবং মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, যা রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
3. শরীরচর্চার অভাব – রাতে দেরি করে ঘুমানো মানে সকালে দেরিতে ওঠা, ফলে নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটার সময় পাওয়া যায় না।
4. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস – অনেকেই রাত জাগার সময় কফি বা জাঙ্ক ফুড খান, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিলস বা শর্ট ভিডিও দেখার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করলেই এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। তাদের সুপারিশ—
• সময় নির্ধারণ করুন: ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে সব ধরনের স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন।
• ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন: ফোনের নাইট মোড বা ব্লু লাইট ফিল্টার চালু রাখুন।
• রিল্যাক্সেশন টেকনিক: ঘুমানোর আগে গভীর শ্বাস নেওয়া বা মেডিটেশনের অভ্যাস মানসিক চাপ কমায়।
• বিকল্প বিনোদন বেছে নিন: বই পড়া বা সুমধুর গান শোনা ঘুমের জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে।
• শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ান: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
রাত জেগে রিলস দেখা স্বল্পমেয়াদে শুধু ঘুমের সমস্যা তৈরি করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে এটি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের জন্য ঘুমের রুটিন ঠিক রাখা এবং রাতে স্ক্রিন টাইম কমানো এখন সময়ের দাবি।
ভালো ঘুম মানেই সুস্থ শরীর, আর সুস্থ শরীর মানেই সুখী জীবন—এই সত্য মনে রেখে আমাদের ডিজিটাল অভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি।