বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিতে ধনী-গরিবের বৈষম্য একটি বড় সমস্যা। প্রচলিত সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা সম্পদকে সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত করে, যার ফলে দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়। কিন্তু ইসলাম একটি সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রস্তাব করে যেখানে সম্পদ শুধু পুঞ্জীভূত না হয়ে বরং সবার মাঝে প্রবাহিত হয়। এই ব্যবস্থা ব্যবসা, যাকাত, এবং সাদাকাহর মতো স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত, যা সমাজের সকল স্তরের মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক ভারসাম্য নিশ্চিত করে।
ইসলামী নীতি অনুসারে, অর্থ সম্পদ জমা করে রাখার বিষয় নয়, বরং তা সমাজের সকল স্তরে আবর্তিত হওয়া জরুরি। ব্যবসায়ে লাভ-ক্ষতির ঝুঁকি গ্রহণের মাধ্যমে এবং যাকাতের মতো বাধ্যতামূলক দান ব্যবস্থার মাধ্যমে এই প্রবাহ বজায় রাখা হয়। এতে ধনীরা তাদের সম্পদের একাংশ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতে বাধ্য হন, যা অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে।
রাসুলুল্লাহর (সা.) সাহাবি উসমান (রা.) এর মতো মহান ব্যক্তিরা ইসলামী অর্থনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও তা আল্লাহর পথে ব্যয় করতেন এবং বিলাসিতা থেকে দূরে থাকতেন। তার সম্পদ সুদ বা অন্য কোনো অবৈধ উপায়ে অর্জিত হয়নি, বরং হালাল ব্যবসা থেকে তা লাভ করেছেন। এই উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, ইসলাম সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে নয়, বরং তা সঠিক পথে ও নৈতিক উপায়ে ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করে।
অর্থনীতি কেবল বৈষয়িক সমৃদ্ধি নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে। সমাজের দুস্থদের পাশে দাঁড়ানো এবং দানশীলতার মাধ্যমে মানসিক শুদ্ধতা লাভ করা সম্ভব। যাকাত ও সাদাকাহর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের আর্থিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ধনী ব্যক্তিদের মনেও আল্লাহভীতি বৃদ্ধি পায়।
এই অর্থনৈতিক আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, ইসলামী অর্থনৈতিক মডেল কেবল একটি ধর্মীয় বিধান নয়, বরং এটি একটি সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা যা বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও বৈষম্যের বাস্তবসম্মত সমাধান দিতে পারে।