close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

রাষ্ট্রসংষ্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় ও কিছু প্রস্তাব ..

Jony King avatar   
Jony King
মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম ভূইয়া:

কোন দেশ যখন একটি স্বৈরাচারী শাসনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করে তখন নতুন নেতৃত্বের সামনে দেশ পুনর্গঠন এবং সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের বিশাল চ্যালেঞ্জ থাকে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে দেশকে স্থিতিশীল রাখা যথেষ্ট নয়। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং একটি গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের ভিত্তি স্থাপন করার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের মনোনিবেশ করা। 
এ ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও রুপরেখা তুলে ধরা হলো:

১. সুষ্ঠ নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থা 
*  Truth and Reconciliation Commissions: আওয়ামী লীগ শাসনামলের ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের​ সময় সংঘটিত সকল নির্যাতন ও হত্যার​ ঘটনা তদন্ত এবং নথিভুক্ত করার জন্য কমিশন গঠন করা, যাতে ভুক্তভোগীরা তাদের কথা বলতে পারে এবং জাতীয় নিরাময় প্রক্রিয়া এগিয়ে যায়।
*  মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার: অত্যাচারের জন্য দায়ীদের ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন করা।
*  ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন: পূর্ববর্তী শাসনের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

২. নিরাপত্তা খাতের সংস্কার:   
*  সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর অপরাজনীতিকরণ: নিরাপত্তা বাহিনীকে পুনর্গঠন করা। যাতে ভবিষ্যতে নির্যাতনের ঘটনা না ঘটে এবং তারা বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে পারে।
* পুলিশ,বিজিবি,আনসারদের ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ করে জণগনের সেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
*  স্বৈরাচারী সন্ত্রাসীদের​ হাতে থাকা অস্ত্র পুনরুদ্ধার​ ও নিরস্ত্রীকরণ। 

৩. সংবিধান ও আইনগত সংস্কার
*  নতুন সংবিধান প্রণয়ন: গণতান্ত্রিক নীতি, মানবাধিকার এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা।
*  বিচার বিভাগের সংস্কার: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা শক্তিশালী করা। যাতে এটি দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে আইনের শাসন বজায় রাখতে পারে।
*  নির্বাচনী সংস্কার: একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থা স্থাপন করা। যেখানে স্বাধীন নির্বাচন পরিচালনা সংস্থা থাকে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হয়।

৪. দুর্নীতি বিরোধী ব্যবস্থা:
* দুর্নীতি দমন কমিশন ঢেলে সাজানো: দুর্নীতি তদন্ত এবং বিচার করার জন্য স্বাধীন দুদক গঠন করা। সরকারি ক্রয় এবং ব্যয় পরিচালনায় স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা। আওয়ামী শাসনামলের ১৬ বছরের ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক ছোট ব​ড় প্রত্যেকটি দূর্নীতির তদন্ত, বিচার ও পাচার করা সকল টাকা উদ্ধার করার প্রক্রিয়া শুরু করা। প্রয়োজনে বৈদেশিক সরকারের সাথে সমন্বয় করা। ব্যক্তি পর্যায়ে সরকারী ও সামরিক শাখার সকল দূর্নীতিবাজ হোক বর্তমানে কর্মরত কিংবা আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের ১৬ বছরের যেকোন সম​য় চাকুরীরত ছিল কিন্ত বর্তমানে প্রাক্তন অবসরপ্রাপ্ত সকল দূর্নীতিবাজ মন্ত্রী,সংসদ সদস্য​,সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী,তাদের পরিবার,আত্মীয়স্বজন, নিকটবন্ধুস্বজনদের​ তদন্ত ও বিচারের আওতায় এনে সকল দূর্নীতিপ্রাপ্ত টাকা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা। যে দেশেই হোক​ পাচার করা সকল টাকা উদ্ধার ও দেশে ফেরত আনা। বিদেশে পালিয়ে থাকলে তাদের গ্রেপ্তার করে দেশে ফেরত এনে বিচার করা এবং তিরস্কার পদ্ধতি চালু করা। এ প্রক্রিয়ায় যেন স​ৎ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হ​য় সেদিকে খেয়াল রাখা।
* সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ব্যবস্থাপনা: পূর্ববর্তী শাসনামলের দ্বারা চুরি হওয়া সম্পদের সনাক্তকরণ এবং পুনরুদ্ধার করা। উদ্ধারকৃত অর্থ দেশ পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহার করা।

৫. অর্থনৈতিক সংস্কার:

* স্থিতিশীলতা ও পুনরুদ্ধার: মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা, জাতীয় মুদ্রাকে শক্তিশালী করা। মুদ্রার প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার এবং বৈদেশিক সাহায্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণ সহ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
* জমি ও সম্পত্তি সংস্কার: জমির মালিকানা ও সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কিত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা। যা পূর্ববর্তী শাসন দ্বারা বিকৃত বা বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে। তাছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা।
* জনসেবা খাতের সংস্কার: সিভিল সার্ভিসকে পুনর্গঠন ও পেশাদার করা। যাতে এটি দক্ষ, মেধাভিত্তিক এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করে।

৬. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ
* সুশীল সমাজের শক্তিশালীকরণ: এনজিও, সম্প্রদায় সংগঠন এবং মুক্ত মিডিয়া সহ একটি শক্তিশালী সুশীল সমাজের বিকাশকে উৎসাহিত করা। যাতে জবাবদিহিতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
* প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ: প্রশাসনের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঢেলে সাজানো এবং শাসনব্যবস্থা জণগনের মাঝে প্রচার করা। স্থানীয় ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষকে তাদের সম্প্রদায়-নির্দিষ্ট প্রয়োজন পূরণের ক্ষমতা দেওয়া।

৭. সামাজিক সংস্কার
* শিক্ষা ও নাগরিক সচেতনতা: শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করা। যাতে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং দেশের ইতিহাসের সঠিক উপলব্ধি প্রচারিত হয়। সকল ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। বই পুস্তক বা উপাসনালয়ে ধর্মিয় আঘাত হানে এমন আইন বা আদেশ বাতিল করা।
* স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সেবা: বিশেষত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা-বঞ্চিত এলাকায় মৌলিক পরিষেবাগুলি যেমন- স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রসার করা।

৮.ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন:
* জাতীয় ঐক্য প্রচার করা: জাতীয় ঐক্যকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও সংলাপ শুরু করা। যাতে স্বৈরাচারের কারণে সৃষ্ট সামাজিক ফাটলগুলো দূর করা যায়। 
* সাংস্কৃতিক ও ইতিহাস পুনঃউদ্ধার: সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের পুনরুদ্ধার ও উদযাপনকে উৎসাহিত করা। যা স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে দমন করা হ​য়েছে​।

৯। জাতীয় মুক্তগণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা 

* দেশের সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া। স্বৈরাচারী সরকারের দলীয় মিডিয়াকে সংস্কার করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের ব্যবস্থা করা।
* স্বৈরাচারী সরকার দ্বারা নির্যাতিত সংবাদকর্মীদের পুনরায় চাকরিতে বহাল করা। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে আহত ও নিহত সংবাদকর্মীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
* সকল অনলাইন গণমাধ্যমকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং দেশের গণমাধ্যমের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।  গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগে পুর্ন সহায়তা করা।

অন্তর্বর্তী সরকার উল্লেখিত এ  অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কারগুলো স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করা উচিত। জনগণ এবং সরকারের অংশীদারদের সাথে ব্যাপক পরামর্শের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হয়ে জনগণের আস্থা এবং সমর্থন পাওয়া যাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রযুক্তিগত সহায়তা,তহবিল এবং এই সংস্কারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

ধন্যবাদ​, বাংলাদেশ চিরজীবি ও চির​​উন্নত হোক​।

লেখক:
মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম ভুইয়া জনি
সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট 
ই-মেইল: jonyking47@gmail.com

कोई टिप्पणी नहीं मिली