কূটনৈতিক সূত্র বলছে, পুতিন দক্ষতার সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের ব্যবহার করে এই বৈঠকের আয়োজন নিশ্চিত করেছেন। শীর্ষ বৈঠকের আগে সীমিত পরিসরে আকাশ ও সমুদ্রে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এমনকি সংঘাত ‘ফ্রিজ’ করার একটি কাঠামো নিয়েও প্রাথমিক আলোচনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে ইউক্রেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের মধ্যে এখনো বড় ফারাক রয়েছে।
জানা যায়, আগে আলোচনা হচ্ছিল বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের সীমান্তে লড়াই থামানো এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের পথ বন্ধ করে দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের সুযোগ রাখার ব্যাপারে। কিন্তু, গত ৬ আগস্ট মস্কো সফরে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ পুতিনের কাছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং জ্বালানি বাণিজ্যের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এর বিনিময়ে পুতিন দাবি করেন, ইউক্রেন যেন দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের প্রশাসনিক সীমানা থেকে পিছু হটে। যদিও এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলেনস্কি।
ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরেও এই শান্তি প্রচেষ্টাকে ঘিরে দ্বন্দ্ব রয়েছে। উইটকফ রাশিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের ‘ডিল’-এর পক্ষে ছিলেন, আর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল কিথ কেলগের নেতৃত্বাধীন আরেকটি দল রাশিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ড ও অস্ত্র সরবরাহের বিস্তারিত বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেয়। সর্বশেষ প্রস্তাবে এই দুই ধারা মিলিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুতিনের জন্য আলাস্কার বৈঠক নিজেই এক ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য, যদিও যুদ্ধ বন্ধের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি তিনি এখনো দেননি। রণক্ষেত্রে রুশ বাহিনী ধীর গতিতে হলেও অগ্রসর হচ্ছে এবং ইউক্রেনের সামরিক নেতৃত্ব মনে করছে, অন্তত আরও এক বছর সংঘাত চলতে পারে। অর্থনৈতিক চাপে পুতিন হয়তো আপাতত অর্জিত অবস্থান ধরে রাখার পথ খুঁজতে পারেন, তবে তা নিজের জাতীয়তাবাদী অবস্থানের সঙ্গে মেলানো কঠিন হবে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। জুলাইয়ের শেষদিকে জেলেনস্কি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার স্বাধীনতা সীমিত করার চেষ্টা করলে তীব্র গণপ্রতিবাদ শুরু হয়। পরে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেও বিষয়টি পশ্চিমা মিত্রদের বিরক্ত করেছে, চাপ সৃষ্টি করেছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও।
এ অবস্থায় ১৫ আগস্টের বৈঠক বাস্তবে কতটা শান্তির দিকে এগোতে পারে, তা এখনো অনিশ্চিত। অনেকের মতে, পুতিন হয়তো শুধু সময় কিনছেন। আবার অনেকে মনে করছেন—এটি দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটানোর একটি সুযোগও হতে পারে।