close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরের নামকরণ ও রাজাপ্রথার ইতিহাস

আসগর সালেহী avatar   
আসগর সালেহী
এমদাদুল ইসলাম নয়ন

চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণাংশে অবস্থিত বৃহত্তর রাজানগর জনপদ একসময়ে ছিল চাকমা, মগ ও মিশ্র বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর বাসস্থান। মোগল ও ইংরেজ আমলে এই জনপদ পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে এলাকাটি চট্টগ্রাম জেলার আওতায় আসে।

রাজানগরের নামকরণ ও রাজবাড়ী

১৭৩৭ সালে চাকমা সম্প্রদায়ের ৪০তম রাজা শুকদেব রায় রাঙ্গুনিয়ার শুখবিলাশ থেকে এসে একটি রাজবাড়ী নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই এ জনপদের নাম হয় রাজানগর। রাজবাড়ীর পাশেই বসানো হয় একটি বাজার, যা এখন ‘রাজার হাট’ নামে পরিচিত। হাটের দুই পাশে খনন করা হয়েছিল দুটি দিঘি, যা এখনও টিকে আছে। দিঘির উত্তরপাড়ে ১৭৫৭ সালে একটি মন্দির এবং পাশাপাশি ‘গোলাম খাঁর মসজিদ’ নির্মিত হয়। বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে এবং মন্দিরটিও বিদ্যমান।

রাজবাড়ী থেকে আধা কিলোমিটার দূরে রাজা শুকদেব রায় একটি ফুলের বাগান স্থাপন করেন। এই জায়গাটি এখনও ফুলবাগিচা নামে পরিচিত।

রাজা শুকদেব রায় ও উত্তরসূরি

নিঃসন্তান রাজা শুকদেব রায়ের মৃত্যুর পর তার পালকপুত্র শের দৌলত খাঁন ৪১তম রাজা হন। ইংরেজ আমলে রাজাদের ‘খাঁন’ উপাধি দেওয়া হতো। এই রাজবংশের ধারাবাহিকতায় জানবক্স খাঁন, তব্বর খাঁন, জব্বর খাঁন (১৮১৪ পর্যন্ত) রাজত্ব করেন। পরে জব্বর খাঁনের পুত্র ধরম বক্স খাঁন ৪৫তম রাজা হন।

রানী কালিন্দী দেবীর শাসন

রাজা ধরম বক্স খাঁনের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রানী কালিন্দী দেবী ৪৬তম রাজা (রানী) হিসেবে ৪৩ বছর শাসন করেন। রানী কালিন্দীর আমলে জনপদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়। হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ, মন্দির, বৌদ্ধ বিহার নির্মিত হয়। সকল ধর্মের মানুষ রানী কালিন্দীকে ভালোবাসতেন।

হাট-বাজার, বিল-পুকুর ও রাস্তা

রাজা ধরম বক্স খাঁন তার নামে ‘ধরম হাট’ বসান, যা আজ ধামাইর হাট নামে পরিচিত। এই হাটের উত্তর-পূর্বে ছিল রাজার বিল, যেখানে তিনি জমি লিজ দিতেন। বিলের তীরে ধরম পুকুর নামে বিশাল পুকুর খনন করা হয়।

রানী কালিন্দী রানীর হাট নামে একটি বাজার স্থাপন করেন, যা আজও অন্যতম বড় বাজার। তারই নামানুসারে পার্শ্ববর্তী জনপদের নামকরণ হয় কালীন্দপুর, যা পরবর্তী সময়ে ইসলামপুর নামে পরিচিতি পায়।

রানী কালিন্দী কালিন্দী রানী সড়ক নির্মাণ করেন, যা রানীর হাট থেকে কাপ্তাই রোড পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৮৬৪ সালে তিনি রাজবাড়ীর পাশে একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করে বার্ষিক মহামুণি মেলা চালু করেন।

রাজবংশের শেষ অধ্যায়

১৮৭৩ সালে রানী কালিন্দীর মৃত্যুর পর রাজা হন তার ভগ্নীপতি হরিশ্চন্দ্র রায়। ১৮৭৪ সালে তিনি সেনাবাহিনীসহ রাঙ্গামাটি চলে গেলে রাজানগরের রাজবাড়ীটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

এরপর রাজা ভূবণ মোহন রায়, নলিনাক্ষ রায় এবং ব্যারিস্টার ত্রিদিব রায় রাজত্ব করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ায় ত্রিদিব রায় পাকিস্তান চলে যান এবং আজীবন মন্ত্রী হন। ২০১২ সালে তার মৃত্যু হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে রাজপ্রথা না থাকলেও ত্রিদিব রায়ের ছেলে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ঐতিহ্যবাহী রাঙ্গামাটি রাজবিহারে বসবাস করছেন। রাঙ্গুনিয়ার পরিত্যক্ত রাজবাড়ীর পাশে তার নামে একটি বেসরকারি স্কুলও রয়েছে।

کوئی تبصرہ نہیں ملا