রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী ও ইছামতী নদী রক্ষায় এক ঐতিহাসিক সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক বিভাজন পেরিয়ে পরিবেশ ও উন্নয়ন রক্ষার অঙ্গীকার করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এলডিপি, ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় নাগরিক পার্টি, প্রশাসন ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ‘রাঙ্গুনিয়ার সচেতন ছাত্র-জনতা’র উদ্যোগে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান।
সভায় কর্ণফুলী, ইছামতী ও শিলক খালে অবৈধ বালু উত্তোলন, দখল, দূষণ এবং নদীভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা বলেন, “এই নদী রক্ষা করা মানে রাঙ্গুনিয়ার অস্তিত্ব রক্ষা করা।”
সভায় বক্তব্য রাখেন মেজর আবু শাকের ভুইয়া, হুমাম কাদের চৌধুরী, অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার, মাওলানা মুহাম্মদ হাছান মুরাদ, আহমদ কবির, মাওলানা করিম উদ্দিন হাছান, সাহিদুল ইসলাম আরিফ, আশরাফ গনি চৌধুরী, এ বি এস মোরশেদ এবং মোহাম্মদ ইলিয়াছ তালুকদার। তরুণদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন আবদুল করিম টিপু, আদনান রাফি, মো. কলিমুল্লাহ, মো. সাজিদ, সরওয়ার নূর, ওয়াহিদুল ইসলাম ওয়াহিদ, উমর ফারুক, মো. আসলাম হোসেন আসাদ, মো. আসিক, আফিফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও মো. অপু প্রমুখ।
‘রাঙ্গুনিয়ার সচেতন ছাত্র-জনতা’র পক্ষ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়—
১. অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও সব ইজারা বাতিল।
২. উপজেলা পর্যায়ে নদী রক্ষা কমিটি গঠন।
৩. কর্ণফুলীতে নিয়মিত নৌ পুলিশের টহল ব্যবস্থা।
৪. বেতাগী এলাকায় স্থায়ী নিরাপত্তা ফাঁড়ি স্থাপন।
বক্তারা বলেন, এসব দাবির বাস্তবায়ন হলে রাঙ্গুনিয়ার নদী ও পরিবেশ টেকসইভাবে সংরক্ষিত হবে।
সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান বলেন, “নদী রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌ পুলিশের টহল বৃদ্ধি, অবৈধ ইজারা বাতিল এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে মনিটরিং টিম গঠন করা হবে।”
রাঙ্গুনিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর এমন একমঞ্চে আসা সাম্প্রতিক সময়ে বিরল ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, এই ঐক্য ভবিষ্যতে পরিবেশ রক্ষায় নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। “নদী বাঁচলে কৃষি বাঁচবে, জীবিকা বাঁচবে, রাঙ্গুনিয়া বাঁচবে”—এই স্লোগানে বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এই বৈঠক প্রমাণ করে যে, পরিবেশ রক্ষায় রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। রাঙ্গুনিয়ার এই বৈঠক দেশের অন্যান্য প্রান্তে অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।
বৈঠকের মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়ার জনগণ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়ে নদী রক্ষায় যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন, তা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগ পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।