পূর্ব ইউক্রেনের দিনিপ্রোপেত্রভস্ক এবং উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের আরও তিনটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সামরিক বাহিনী। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কয়েকটি বসতিতে লড়াইয়ের কথা জানানো হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া তাদের ধীরগতির সামরিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের আরও তিনটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সৈন্যরা। এই অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় সামরিক কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই তিনটি গ্রামের মধ্যে একটি দিনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলে এবং বাকি দুটি উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলে অবস্থিত। এই দখলদারিত্ব ইঙ্গিত দেয় যে, রুশ বাহিনী এখন শুধু ডোনেটস্ক অঞ্চলেই নয়, বরং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতেও তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।
রুশ মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছে যে, মস্কোর সৈন্যরা দিনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলের প্রিভিলিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এই গ্রামে রুশ বাহিনী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের সামরিক অবস্থান তৈরি করছিল। এই অগ্রগতি দিনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার প্রথম সারির অগ্রগতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এছাড়াও, খারকিভ অঞ্চলে তারা দুটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো কার্যত ধ্বংসপ্রাপ্ত কুপিয়ানস্ক শহরের কাছে পিশচান এবং অন্যটি হলো রাশিয়ার সীমান্তের ঠিক ভিতরে অবস্থিত টাইখে গ্রাম। খারকিভ অঞ্চলের এই গ্রামগুলো দখল করা রুশ বাহিনীর জন্য একটি কৌশলগত অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এদিকে, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীও অন্তত দুটি বসতিতে লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করেছে। তবে এর মধ্যে কোনটি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে কি না, সে বিষয়টি তারা পরিষ্কার করেনি। যুদ্ধক্ষেত্রে উভয়পক্ষের এই বিবরণ স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা যায়নি, যা সংঘাতপূর্ণ এলাকার তথ্য যাচাইয়ের স্বাভাবিক কঠিন পরিস্থিতি তুলে ধরে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ এক প্রতিবেদনে বলেছেন, যে গ্রামগুলোতে রুশ বাহিনী অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছিল, তার মধ্যে পিশচান একটি। তবে, তারা এই অঞ্চলে সাতটি আক্রমণের মধ্যে ছয়টিই প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। এই দাবিগুলো থেকে বোঝা যায়, রুশ অগ্রগতি ইউক্রেনীয় বাহিনীর কঠোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে।
রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে বেশিরভাগ সংঘাত ডোনেটস্ক অঞ্চলে সংঘটিত হচ্ছে। রুশ বাহিনী খারকিভ অঞ্চলের এলাকা দখলের চেষ্টা করছে এবং এখন দক্ষিণ-পূর্ব দিনিপ্রোপেত্রভস্কের গ্রামগুলোতেও তাদের অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার খারকিভ আঞ্চলিক গভর্নর বলেছিলেন, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে ১৭টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে টাইখে গ্রামও ছিল। এই সংঘর্ষের তীব্রতা ইউক্রেন সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে বিদ্যমান উচ্চ সামরিক উত্তেজনাকেই নির্দেশ করে।
চলতি মাসেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন যে, মস্কোর সৈন্যরা পুরো ফ্রন্ট লাইনজুড়ে সক্রিয় হয়েছে। এই নতুন তিনটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ পুতিনের সেই বক্তব্যেরই বাস্তবায়ন বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের মুখেও রাশিয়ার ধীর ও কৌশলগত গ্রাম দখল যুদ্ধটিকে দীর্ঘায়িত করার এবং আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণে মস্কোর দৃঢ় সংকল্পকে প্রতিফলিত করে।