মাহফুজ জাহিদ :
পুরান ঢাকার রাস্তায় রক্ত ঝরেছে একজন নিরীহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর। তার নাম সোহাগ। ব্যবসা করে সংসার চালাতেন, কারো ক্ষতি করতেন না। কিন্তু একদল সন্ত্রাসী তার কাছে চাঁদা চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলাফল—প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে, ৪ থেকে ৫ জন একযোগে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে তার জীবন কেড়ে নেয়।
এই ঘটনার পরেই জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এই হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার করতে হবে এবং প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন সাহস না পায়।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর চলতে দেওয়া যাবে না। ব্যবসায়ী, হকার, ফুটপাতের দোকানি—যে-ই হোক না কেন, নিজের শ্রমের টাকা দিয়ে সন্ত্রাসীদের মুখে তুলে দিতে বাধ্য হওয়া মানে পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে অবমূল্যায়ন করা।
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রশ্ন উঠেছে—আমারই মতো আরেকজন মানুষ, সে যদি চাঁদা চায়, আমি কেন দেবো? আমি কষ্ট করে আয় করি, গরমে ঘেমে, ধার করে ব্যবসা করি। সেই অর্থ কেউ এসে দশজন নিয়ে এসে জোর করে নেবে—এটা কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রে হতে পারে না।
সাধারণ মানুষ আজ বলছে, এখন সময় এসেছে একসঙ্গে রুখে দাঁড়াবার। যারা চাঁদা চাইবে, দলবদ্ধভাবে আসবে—তাদের ভয় না পেয়ে স্থানীয়রা তাদের ধরেই পুলিশের হাতে তুলে দেবে। যে দলেরই হোক না কেন, বিচার হতে হবে আইনের মাধ্যমে। কারণ রাষ্ট্র সবার, সম্পদ সবার, ফুটপাত সবার, জীবিকার অধিকার সবার।
যদি সরকার ফুটপাত ব্যবহার করতে মাসিক ভাড়া নেয়, তাহলেই দিব। কিন্তু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীভিত্তিক সন্ত্রাসীদের কেন চাঁদা দেবো?
এই ঘটনায় অনেকেই বলছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন আইন পাস করা উচিত যেখানে বলা থাকবে—চাঁদাবাজি করলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। সেইসঙ্গে যারা চাঁদা দাবি করবে, তাদের জনগণই ধরবে এবং পুলিশের হাতে তুলে দেবে।
প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত শেষ করে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে—যেমন যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড।
এই ঘটনায় রাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগকে কঠোর হস্তে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো, চাঁদাবাজদের সাহস আরও বাড়বে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়বে।
শুধু এক সোহাগের রক্তে নয়, প্রতিটি নিরীহ ব্যবসায়ীর নিরাপত্তার স্বার্থেই আজ সবাই একটাই দাবি তুলেছে—বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হোক।