close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

পটিয়ার দুর্ধষ সন্ত্রাসী কাসেম বাহিনীর প্রধান হামিদ ২ দিনের রিমান্ডে..

Md Sahadat Hossain avatar   
Md Sahadat Hossain
****

পটিয়ার বিতর্কিত কাশিয়াইশ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বাহিনীর প্রধান ও দুর্ধষ সন্ত্রাসী আবদুল হামিদ (৩৭) কে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত সোমবার সিনিয়র জুডিসিলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পটিয়া তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তিনি আরও বলেন, অস্ত্র মামলায় গত সোমবার আসামি আবদুল হামিদকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। শুক্রবার হামিদকে রিমান্ডের জন্য পটিয়া থানায় আনা হয়েছে। শনিবার ও রবিবার দুইদিনের রিমান্ড শেষে আবারো কারাগারে পাঠানো হবে।

দুর্ধষ সন্ত্রাসী আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে পটিয়াসহ বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত ২৭ মে রাতে তিনটার দিকে উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা মািজপাড়া এলাকার একটি টিনশিট ঘরে তার আস্তানা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পটিয়া থানা পুলিশ। এসময় স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার আস্তানা থেকে ১টি দেশীয় তৈরি এলজি, ৩টি কার্তুজ, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ৩টি রাম-দা ও ১টি ধারালো টিপ ছোড়া উদ্ধার করে পুলিশ। সে জিরি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সাঁইদাইর গ্রামের এখলাস মিয়ার ছেলে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে কাশিয়াইশ এলাকার দুর্ধষ সন্ত্রাসী আবদুল হামিদ তার আস্তানায় রয়েছে। সে খবর পেয়ে  পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম, ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম সফল অভিযান পরিচালনা করেন।

স্হানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৫ মামলার আসামি দূর্ধষ সন্ত্রাসী আবদুল হামিদ কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক বিতর্কিত চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের পালিত সন্ত্রাসী। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থেকে হামিদ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠে এলাকায়। কাসেমের অবৈধ দখলদারত্ব, সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা, কিশোর গ্যাং, মাদক, ছিনতাই সহ নানা কাজে হামিদকে ব্যবহার করতেন আবুল কাশেম। বিগত ৩৬ বছর ধরে চেয়ারম্যানের চেয়ারটি ধরে রাখতে আবুল কাশেম এলাকার সাধারণ মানুষ, হিন্দু মুসলিম ও বড়ুয়াসহ সব সম্প্রদায়ের উপর নিপিড়ন নির্যাতন চালাতেন। এমনকি এলাকায় রাম রাজত্ব ধরে রাখতে গিয়ে ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল রাতে বুধপুরা বাজারে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার ছোট ভাই মোহাম্মদ সোহেল ছুরিকাঘাতে খুন হন। গত বছরের ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবুল কাশেম গা ঢাকা দেন। এরপর সে মাসের গের ১৮ আগস্ট সকালে তার বাহিনী প্রধান আবদুল হামিদের নেতৃত্ব সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার পর হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা আবুল কাশেমকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং তার সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ সময় খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর টিম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাকে উদ্ধার করে পটিয়া থানায় নিয়ে যায়। সেদিন পরিষদ থেকে সেনাবাহিনীর টিম তাকে উদ্ধার করে আনার সময় ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেন হাজারো বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা বিভিন্ন গাড়িতে করে মিছিল সহকারে থানায় এসে জড়ো হন। থানায় এসে হাজারো বিক্ষুব্ধ জনতা থানার গেইটের রাইরে অবস্থান নেন সারাদিন। তাদের সাথে যোগ দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা। কাসেম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সেদিন ৮টি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী ও বিক্ষুব্ধ জনতা। মাস দুয়েক জেল থেকে বের হয়ে পরিষদের চেয়ারে বসতে না পারার কারনে এলাকায় আবারো তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান হামিদকে দিয়ে যারা তার অপকর্মের বিরুদ্ধে সরব ছিল তাদের উপর চালান হামলা মামলা। প্রকাশ্যে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সন্ত্রাসী হামিদের মাধ্যমে পাঠানো হতো হামলা মামলার বার্তা। বুধপুরা বাজার এলাকায় তার আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে গত ১৮ মে রাতে প্রকাশ্যে বুধপুরা বাজারের একটি দোকান থেকে স্হানীয় গাজী আজগর আলী নামের এক যুবককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তোলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী হামিদ ও তার দল। রাতে সাইঁদাইর এলাকায় একটা নির্জন স্হানে নিয়ে গিয়ে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যায় সন্ত্রাসী হামিদ। সে দিন রাতে তাকে স্হানীয়রা দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানেই যুবক গাজী আজগর আলীর দুই হাতে অপারেশন করা হয়। এখনো সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় কাসেম বাহিনীর প্রধান সন্ত্রাসী আবদুল হামিদকে প্রধান আসামি করে আহত যুবকের স্ত্রী বাদী হয়ে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন।

পটিয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ কাশিয়াইশ এলাকায় অপহরণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসা সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিলেন সন্ত্রাসী হামিদ। এলাকায় রয়েছে তার বাহিনীও। তার বিরুদ্ধে পটিয়া থানা সহ বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা রয়েছে।

পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, কাশিয়াইশ এলাকার দূর্ধষ সন্ত্রাসী আবদুল হামিদকে দুই দিনের রিমান্ডের জন্য শুক্রবার কারাগার থেকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। শনি ও রবিবার দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হবে। এর আগে তাকে ধরতে আমরা বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু সে পুলিশের উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই এলাকা থেকে সটকে পড়তেন। গত ২৭ মে রাতে তাকে আমারা গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। এসময় তার কাছ থেকে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত রাম দা, চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়েছে। পটিয়ায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

نظری یافت نشد