close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

প্রতিবেশীদের কটূক্তি সইতে না পেরে টেনিস তারকা মেয়েকে গুলি করে হত্যা করলেন বাবা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Radhika Yadav, a rising tennis star and influencer, was shot dead by her own father in Gurgaon, unable to endure the constant taunts of neighbors about her success and social media presence.

টেনিস কোর্ট থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠা রাধিকা যাদবের উত্থান থেমে গেল বাবার গুলিতে। গুরগাঁওয়ে প্রতিবেশীদের কটূক্তি সহ্য করতে না পেরে নিজের মেয়েকেই হত্যা করলেন বাবা দীপক যাদব।

 

রাধিকা যাদব—২৫ বছর বয়সী এক উদীয়মান টেনিস খেলোয়াড়। ভারতের হরিয়ানার গুরগাঁও জেলার সুশান্ত লোক-টু এলাকায় তাঁর বাস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে ধীরে ধীরে ক্যারিয়ারের সাফল্য অর্জন করছিলেন তিনি। শুধু টেনিস খেলতেন না, নিজেই পরিচালনা করতেন একটি টেনিস একাডেমিও। সমাজের উচ্চপদস্থ অনেকে ব্যক্তিগত কোচিংয়ের জন্য তাঁর কাছে আসতেন। খেলাধুলার পাশাপাশি ইনস্টাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছিলেন তিনি।

কিন্তু এই উত্থানই যে তাঁর জীবনের জন্য কাল হবে, সেটা কেউ কল্পনা করেননি। বাবার হাতে মেয়ের মৃত্যু—এ যেন এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে, নিজ ঘরে রাধিকাকে পরপর পাঁচটি গুলি করেন তাঁর বাবা দীপক যাদব। নিজের লাইসেন্স করা রিভলবার ব্যবহার করে মেয়ের বুকে তিনটি গুলি করেন তিনি, যা রাধিকাকে ঘটনাস্থলেই শেষ করে দেয়। সে সময় রাধিকার মা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পাশের কক্ষে বিশ্রামে ছিলেন।

খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি বেসরকারি হাসপাতাল পুলিশকে জানায়, একজন তরুণী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ হাসপাতালে ছুটে যায় এবং নিহতের চাচা কুলদীপকে খুঁজে পায়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দীপক যাদবকে গ্রেপ্তার করে এবং তার রিভলবারটি জব্দ করে।

পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, দীপক যাদব দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক চাপে ছিলেন। মেয়ের আয়ের ওপর পরিবারের নির্ভরতা নিয়ে সমাজের কটূ মন্তব্য বারবার শুনতে হতো তাঁকে। প্রতিবেশীরা বলতেন, তোমার ঘরের সবকিছু তোমার মেয়ের টাকায় চলে।এই কথাগুলো ধীরে ধীরে দীপকের মনকে বিষিয়ে তোলে।

পুলিশ জানিয়েছে, দীপক অনেকবার রাধিকাকে তার একাডেমির কাজ বন্ধ করতে বলেন। এমনকি ইনস্টাগ্রামে রাধিকার রিল বানানো নিয়েও বাবার তীব্র আপত্তি ছিল। দীপক মনে করতেন, এসব ভিডিও পরিবারের জন্য অসম্মানজনক। যখনই গ্রামে যেতেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়ের উপস্থিতি নিয়ে তির্যক কথা শুনতে হতো প্রতিবেশীদের কাছ থেকে।

২০০০ সালের ২৩ মার্চ জন্ম নেওয়া রাধিকা যাদব ভারতের অল ইন্ডিয়া টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (এআইটিএ) র‍্যাঙ্কিংয়ে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে সিঙ্গেলসে সর্বোচ্চ ৩৫তম, ডাবলসে ৫৩তম এবং ক্যারিয়ার র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭৫তম অবস্থানে ছিলেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ITF-এও ১১৩তম র‌্যাঙ্কিংয়ে পৌঁছান তিনি। তবে দুই বছর আগে চোট পাওয়ার পর টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া বন্ধ করে দেন এবং তখন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রাধিকার বাসায় যান সাংবাদিকরা। দেখা যায়, তাঁর কোচিং করা অনেক শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙে পড়েছে। বারান্দায় চুপচাপ বসে আছেন তাঁর মা ও চাচা। পাশেই এক বয়স্ক ব্যক্তি আফসোস করে বলেন, একদিন আগেও বলেছিলেন মেয়েকে ভালোবাসেন, পরদিনই তাঁকেই মেরে ফেললেন!

সুশান্ত লোক এলাকার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পবন যাদব বলেন, কিছু প্রতিবেশী রাধিকার সাফল্য মেনে নিতে পারেনি। তারা শুধু ঈর্ষান্বিত নয়, বরং কটূ মন্তব্য করে তার মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

রাধিকার এক ছাত্র বলেছেন, “আমাদের বলেছিল, তার বাবা-মা খুব রক্ষণশীল মানসিকতার। অথচ সে ছিল মিষ্টি ও প্রাণবন্ত, আর একজন দারুণ খেলোয়াড়।

পুলিশ দীপক যাদবের বিরুদ্ধে ৫৬ নম্বর সেক্টরের থানায় হত্যা মামলা রুজু করেছে। মেয়েটির ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো হাতে আসেনি। পুলিশ বলছে, দীপক নিজের দোষ স্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, মানসিক চাপ আর অপমানের ভার সহ্য করতে না পেরে সে এই মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নেয়।

রাধিকা যাদবের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকে ভেঙে দেয়নি, প্রশ্ন তুলেছে পুরো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও সংবেদনশীলতার ওপর। একজন মেয়ে যখন নিজের শ্রমে এবং প্রতিভায় এগিয়ে যায়, তখন সমাজ তাকে কীভাবে দেখে—এই হত্যাকাণ্ড আমাদের সেই আয়নাটি আবারও দেখিয়ে দিল।

No comments found