১৯৫৩ সালে স্যার এডমন্ড হিলারি ও তেঞজিং নর্গের প্রথম এভারেস্ট জয়ী দলের শেষ জীবিত সদস্য কাঞ্চা শেরপা কাঠমান্ডুর নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি ছিলেন সেই ঐতিহাসিক অভিযানের এক পরিশ্রমী ও নীরব নায়ক।
ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সাক্ষী, ১৯৫৩ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট জয়ের প্রথম দলের শেষ জীবিত সদস্য কাঞ্চা শেরপা আর নেই। নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডুর কাপানে নিজ বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি বাহক। তার প্রয়াণে পর্বতারোহণ জগতে একটি নীরব শূন্যতার সৃষ্টি হলো।
১৯৩৩ সালে নামচে অঞ্চলে কাঞ্চা শেরপার জন্ম। কৈশোরেই জীবিকার তাগিদে তিনি দার্জিলিংয়ে পাড়ি জমান। যদিও পাহাড়ের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ছিল না, তবুও এক বছর পর তিনি এভারেস্ট অভিযাত্রী দলের একজন পোর্টার বা বাহক হিসেবে যোগ দেন।
যে দলটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল, সেই দলে সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৫ জন, তবে তাদের সঙ্গে ছিলেন শত শত পরিশ্রমী বাহক। স্যার এডমন্ড হিলারি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের অভিযাত্রী এবং তেঞজিং নর্গে ছিলেন তার গাইড। এই অভিযানে কাঞ্চা শেরপার প্রধান দায়িত্ব ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
কাঞ্চা শেরপা দলের সরঞ্জাম বহন, দড়ি টানা এবং পথ চিহ্নিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছিলেন। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি ৬০ পাউন্ডের বেশি ওজন কাঁধে নিয়ে কাজ করেছেন এবং অক্সিজেন ছাড়াই শেষ বেস ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন।
যদিও কাঞ্চা শেরপার কাজ ছিল অভিযানকে এগিয়ে দেওয়া এবং চূড়ায় ওঠা নয়, তবুও তিনি ছিলেন সেই সাফল্যের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশ। চুড়ার কিছুটা নিচ থেকে কাঞ্চাকে বিদায় জানিয়ে হিলারি ও নর্গে আরোহণ চালিয়ে যান। পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছানোর পর রেডিও বার্তায় তাদের এভারেস্ট জয়ের খবর পান কাঞ্চা। এই খবরে পুরো দল আনন্দ আত্মহারা হয়ে পড়ে।
কাঞ্চা শেরপা শুধুমাত্র প্রথম এভারেস্ট অভিযানেই যুক্ত ছিলেন না। তিনি ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন এভারেস্ট অভিযানে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু একসময় এক তুষারধসে সহকর্মীর মৃত্যু হলে পরিবারের অনুরোধে তিনি এভারেস্ট অভিযানের সমাপ্তি টানতে বাধ্য হন।
এভারেস্ট অভিযানের ইতি টানার পর তিনি পর্যটকদের নিয়ে ট্রেকিং গাইড হিসেবে কাজ করেন। পর্বতারোহণ জগতের মানুষজন বিশ্বাস করেন, এভারেস্ট জয় কেবল দুই অভিযাত্রীর নয়, বরং এর পেছনে কাঞ্চা শেরপার মতো শত পরিশ্রমী শেরপার অবদান ছিল। কাঞ্চা শেরপা নিজে চূড়ায় না উঠেও তাদের সঙ্গে ইতিহাসের অমর সাক্ষী হয়ে থাকবেন প্রথম এভারেস্ট অভিযানের সাফল্যের এক নীরব নায়ক হিসেবে।
তার মৃত্যুতে প্রথম এভারেস্ট অভিযানের একটি জীবন্ত যোগসূত্র ছিন্ন হলো। তার কর্মময় জীবন এভারেস্ট জয়ের পেছনের অগণিত শ্রমজীবী মানুষের আত্মত্যাগ ও পরিশ্রমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
কাঞ্চা শেরপার জীবন এভারেস্টের মতো উচ্চতায় পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় কঠোর পরিশ্রম, নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এবং মানবিক সাহচর্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।