জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, টেকসই পরিবর্তনের জন্য নতুন সংবিধান রচনা অপরিহার্য। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে এ কাজ সম্পন্ন করতে হবে, নইলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।
রাজনীতির অঙ্গনে আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনের বক্তব্য। তিনি মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই করতে হলে বর্তমান সংবিধানের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নতুন করে সংবিধান রচনা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা বহুবার বলেছি যে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখায় গণপরিষদ নির্বাচন অপরিহার্য। এ নির্বাচন যেকোনো সময় অনুষ্ঠিত হতে পারে, তবে আগে নির্দিষ্ট করতে হবে এর ধরণ ও কাঠামো। যদি ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে পাওয়া সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন হয়, তবে আবারও স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তাই নতুন সংবিধান বাস্তবায়ন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।”
আখতার হোসেন দাবি করেন, বর্তমান সংবিধান গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক ধারা বহন করছে, যা সংস্কার ব্যতীত জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, ভোটের নামে যদি পুরনো পদ্ধতিতেই নির্বাচন হয়, তবে তা কেবল ক্ষমতার পালাবদল ঘটাবে, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরি করবে না। পরিবর্তন চাইলে জনগণের অংশগ্রহণমূলক সংবিধানই হতে হবে একমাত্র সমাধান।
এ সময় তিনি বিএনপির অবস্থান নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন। আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নতুন সংবিধান রচনা নিয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। তাদের সংস্কারের প্রতি আগ্রহ কতটা সত্যিকার অর্থে দৃঢ়, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা কি সংস্কারের নামে প্রতারণার পথ নিচ্ছে? জনগণের কাছে এ প্রশ্ন রাখছি।
তিনি আরও জানান, যদি নতুন সংবিধান প্রণয়ন হয় এবং সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে সেটি আদালতে আর চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দৃঢ় হবে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গেও বক্তব্য দেন এনসিপির এই নেতা। তিনি বলেন, জুলাই সনদ ঘোষণার সময় জনগণ আশা করেছিল ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু সনদ বাস্তবায়নের ধরন স্পষ্ট নয়। সংসদ কাঠামো, উচ্চকক্ষের অস্তিত্ব, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, নারী নেতৃত্বসহ সংবিধানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবার পরবর্তী রাজনৈতিক দলের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে টেকসই সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
আখতার হোসেনের মতে, রাজনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে অর্ধেক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কোনো সুফল আসবে না। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে স্পষ্টভাবে নতুন সংবিধান রচনা, গণপরিষদ নির্বাচন এবং সেই অনুযায়ী নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আখতার হোসেনের এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির সংস্কারপন্থী অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আগামীর রাজনৈতিক মেরুকরণে এর প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে, নতুন সংবিধান রচনার দাবি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব এবং কে নেতৃত্ব দেবে, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।