ঢাকায় আজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বৈঠক বসছে। ভিসা বিলোপসহ একাধিক চুক্তি সইয়ের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাত করবেন তিনি।
ঢাকায় কূটনৈতিক অঙ্গনে আজ রোববার বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সফরের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এই বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপের পাশাপাশি পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, শিক্ষা ও গবেষণায় পারস্পরিক অংশীদারিত্ব, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে সমঝোতা, এবং আঞ্চলিক ফোরাম সার্ককে সক্রিয় করার পদক্ষেপ।
এদিকে, আজ সন্ধ্যায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সাক্ষাৎ শুধু সৌজন্য বৈঠক নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরির ইঙ্গিত বহন করছে।
দুই দিনের সরকারি সফরে গত শনিবার দুপুরে ঢাকা আসেন ইসহাক দার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। আগমনের পরপরই ঢাকাস্থ পাকিস্তান দূতাবাসে একাধিক বৈঠকে অংশ নেন তিনি। সেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন ইসহাক দার।
সেই বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের কার্যকরী পুনরুজ্জীবন, আগামী জাতীয় নির্বাচন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সম্পর্কের বিষয়গুলো উঠে আসে। যদিও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করলেও উভয় পক্ষ পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে আলোচনাটি শেষ করে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ইসহাক দারের এই সফর শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বিশেষ করে বিএনপি ও অন্যান্য ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার বৈঠক ভবিষ্যতে আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার মনে করছে এই সফর পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সুযোগ। ভিসা বিলোপ চুক্তি কার্যকর হলে সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের জন্য যাতায়াত সহজ হবে। এর ফলে বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও কূটনৈতিক যোগাযোগ আরও জোরদার হতে পারে।
আজকের বৈঠকের পরবর্তী ঘোষণা ও স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলো দুই দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে, তা শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।