পলিথিনে মুখ, আঠার ঘোরে জাতির ভবিষ্যৎ—কুড়িল ফুটপাথে চলছে 'শৈশবের কারখানা'!
চুরি, নেশা আর ভিক্ষা—ঢাকা শহরের নতুন শিশু শিক্ষানীতি
সুমন হাওলাদারঃ
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৫,
ঢাকার মানুষ এখন আধুনিক। চোখের সামনে শিশুরা নেশা করছে? চুরি করছে? ভিক্ষা করছে? কে কেয়ার করে! নগরের মানুষ সময়ের মূল্য বোঝে—কেউ মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকে, কেউ গাড়ির হর্ন বাজিয়ে ব্যস্ত, কেউবা ফুটপাথের পাশে দাঁড়িয়ে শুধু একটুখানি ‘আহা’ বলে পরের কাজে ছুটে যায়। আর পেছনে? পলিথিনে মুখ গুঁজে শিশুরা ভবিষ্যৎ চিবিয়ে খাচ্ছে।
শৈশব এখন অফার প্যাকেজে: নেশা + চুরি + ভিক্ষা = সারভাইভাল কিট
কুড়িল বিশ্ব রোডে এখন নিয়ম করে দেখা যায়: ছেঁড়া জামা, ময়লা গায়ের রঙ, কাঁধে একটা পলিথিন—ভেতরে জুতার আঠা। আর চোখে? বিস্ময়কর ঘোর!
স্কুলের ব্যাগ নয়, ওদের আছে ‘দয়া ম্যানেজমেন্ট’ স্ট্র্যাটেজি। কেউ নকল কান্না শিখছে, কেউ মোবাইল চুরি করছে, আর কেউ বা হকারদের পিছে ঘুরে ঘুরে ‘কাস্টমার হ্যান্ডলিং’ শিখছে।
যেখানে শিশুরা বস, অপরাধীরা কোচ
স্থানীয় দোকানদাররা জানান—“ওরা বলছে কিছু বললে ওদের বস এসে দেখে নেবে!” হ্যাঁ, দশ বছরের ছেলেমেয়েদের এখন 'অফিশিয়াল বস' আছে।
কুড়িল এখন শহরের ‘ক্রাইম ট্রেনিং সেন্টার’—প্রাথমিক পর্যায়ে ভিক্ষা, মধ্যম স্তরে চুরি, আর উন্নত পর্যায়ে ‘মাফিয়া মডেল’।
আঠা এখন শিশুর ফুড সাপ্লিমেন্ট, আর ফুটপাথ নতুন প্লে-গ্রাউন্ড
বাচ্চারা আঠা শোঁকে আর পাশে বসে থাকা বৃদ্ধা যেন দর্শকসভার সভাপতি। আশেপাশে খেলা করে আরও ছোট ভাই-বোন, যারা দেখে কীভাবে বড় বোনটা ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে স্বপ্নহীন ঘুমে ডুবে যাচ্ছে।
স্বপ্ন? ওটা এখন পলিথিনের গন্ধে হারিয়ে গেছে।
নগর পরিকল্পনায় ‘শৈশব সাফ প্রজেক্ট’ সফল!
না, সরকারের দোষ নেই। এনজিওরও না। জনগণের তো একেবারেই না। কারণ শিশুরা তো রাস্তায়! মানে বাইরে। মানে সমস্যাটা আমাদের বাড়ির ভেতর না।
কেউ কেউ হয়তো পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লাইভ দেয়, কেউ দেয় টিকটক রিল—'ডোনেটিং টু পুওর কিডস’। ব্যস, দায়িত্ব শেষ!
উপসংহার: শিশুরা পলিথিনে মুখ দিলেও, সমাজ দিব্যি মুখ গুঁজে ঘুমায়!
এই শিশুরা যদি একদিন বড় হয়ে ‘অপরাধী’ হয়, তার দায় কার?
তারা যদি স্কুলের বদলে কারাগারে যায়, সেই দায় কার?
তারা যদি ভালোবাসার বদলে ঘৃণা শিখে, সেটা কি শুধু ওদের সমস্যা?
না, এসব প্রশ্ন এখন কেউ করে না। কারণ আমরা জানি—পলিথিনে মুখ দিলেই বাস্তব চাপা পড়ে।
সমাজও মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে থাকতে চায়। চিরঘুমে!
		
				
			


















