close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

পিআর পদ্ধতি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে: তাহের

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Jamaat-e-Islami leader Syed Abdullah Mohammad Taher stated that Bangladesh’s traditional election system has failed, making Proportional Representation (PR) the only viable solution. He warned that el..

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ট্র্যাডিশনাল নির্বাচনী ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে পিআর বা আনুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানে আবারও ফ্যাসিবাদী শাসন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক চলমান। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে ঘিরে অনিয়ম, ভোট কারচুপি এবং জনগণের আস্থাহীনতা এখন একটি বড় বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের রবিবার (২৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু ভোটের জন্য আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর সিস্টেম এখন একেবারেই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই সনদের আইনিভিত্তি’ শীর্ষক বৈঠকে তিনি বলেন, “ট্র্যাডিশনাল নির্বাচনী ব্যবস্থার ব্যর্থতা আজ স্পষ্ট। এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী রাজনৈতিক নেতারা ও বিভিন্ন দল, যারা কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি। বরং এরা সবসময়ই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিকৃত করেছে। সুতরাং এখন সময় এসেছে আনুপাতিক পদ্ধতি চালুর।”

তাহের অভিযোগ করেন, অতীতে এমন কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন আয়োজন করেছে, যাদের সময়ে গণভোটে ৯৯ শতাংশ ভোট কাস্ট দেখানো হতো, যা বাস্তবে অসম্ভব। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি আবারও ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, তবে সেই একই গোষ্ঠী কেন্দ্র দখল করে প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ইতিমধ্যেই মাঠপর্যায়ে আমরা তার আলামত দেখতে পাচ্ছি। এ কারণেই বলছি—পিআর ইজ দ্য বেস্ট সলিউশন।”

তিনি আরও দাবি করেন, জনগণ এখন আর পুরোনো ব্যবস্থায় আস্থা রাখছে না। তার ভাষায়, “যারা বলছেন পিআর বোঝেন না, তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ ইতিমধ্যেই ৭১ শতাংশ মানুষ পিআরের পক্ষে মত দিয়েছে। অথচ আমরা এখনো মৌলিক প্রশ্নকে এড়িয়ে যাচ্ছি। নির্বাচন হবে কি হবে না—এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে পরিবেশকে ঘোলাটে করা হচ্ছে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, আমরা কি রাজনৈতিক সংস্কার মানতে রাজি আছি, নাকি আগের মতো কারচুপি ও জালিয়াতির নির্বাচনে ফিরে যাব?”

সংস্কারবিহীন নির্বাচনের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে তাহের বলেন, “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানেই হচ্ছে আওয়ামী লীগের আমলের মতো একটি ভুয়া নির্বাচন। সংস্কারবিহীন শাসন মানেই ফ্যাসিবাদী শাসন। এমন বাংলাদেশ মানে আমাদের সেই পুরনো অন্ধকারে ফিরে যাওয়া। অথচ জুলাই চেতনা ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী, গণতন্ত্রমুখী ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের প্রতীক। তাই সংস্কারবিহীন নির্বাচন এই নতুন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।”

তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সংস্কার অবশ্যই হবে। সংস্কার বাস্তবায়নের ভিত্তিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশা আল্লাহ। আমি জনগণকে আহ্বান জানাই—তারা যেন এই সংস্কারের দাবিতে দৃঢ় অবস্থান নেন।”

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম কোরবান আলী। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল লতিফ মাসুম, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করীমসহ বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে নতুন কাঠামোয় না আনলে জনগণের আস্থা আর কখনো ফিরবে না। আনুপাতিক পদ্ধতি কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার ভারসাম্যই নিশ্চিত করবে না, বরং তা হবে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার একমাত্র কার্যকর উপায়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা, সংস্কার প্রশ্নে বিভাজন এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিধা—সবকিছু মিলিয়ে দেশবাসীর মধ্যে নতুন এক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তাহেরের বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে তার ঘোষণায় স্পষ্ট হয়েছে, আনুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এখন কল্পনাতীত।

No comments found