"পি আর" (PR) পদ্ধতি ভোটের পূর্ণরূপ হলো Proportional Representation বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব।
এটি এমন একটি নির্বাচন পদ্ধতি যেখানে কোনো দল নির্বাচনে যে শতাংশ ভোট পায়, আইনসভা বা সংসদে তারা প্রায় সেই শতাংশ আসনেই জয়ী হয়।
এটি "ফাস্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট" (First-Past-the-Post) বা "যে জিতেছে সে সব পাবে" পদ্ধতির ঠিক বিপরীত। সাধারণ পদ্ধতিতে, একটি আসনে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়ী হন, भलेই তিনি মোট ভোটের ৫০% এর কম পান। এতে অনেক ভোট 'নষ্ট' হয়।
কিন্তু পি আর (PR) পদ্ধতিতে মূল লক্ষ্য হলো ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বন্টন করা।
পি আর (PR) পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে?
ধরুন, একটি দেশে ১০০টি সংসদীয় আসন রয়েছে এবং একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
- 'ক' দল মোট ভোটের ৪০% পেলো।
- 'খ' দল মোট ভোটের ৩০% পেলো।
- 'গ' দল মোট ভোটের ২০% পেলো।
- 'ঘ' দল মোট ভোটের ১০% পেলো।
পি আর (PR) পদ্ধতি অনুযায়ী, ফলাফল মোটামুটি নিম্নরূপ হবে:
- 'ক' দল পাবে প্রায় ৪০টি আসন।
- 'খ' দল পাবে প্রায় ৩০টি আসন।
- 'গ' দল পাবে প্রায় ২০টি আসন।
- 'ঘ' দল পাবে প্রায় ১০টি আসন।
এভাবে, প্রতিটি দলের পাওয়া ভোট এবং পাওয়া আসনের মধ্যে একটি আনুপাতিক সামঞ্জস্য থাকে।
প্রধান সুবিধা:
- সঠিক প্রতিফলন: এই পদ্ধতিটি ভোটারদের মতামতের সবচেয়ে সঠিক প্রতিফলন ঘটায়। কোনো দল যদি ১০% ভোট পায়, তবে তারা যেনতেনভাবে হলেও আইনসভায় ১০% প্রতিনিধিত্ব পায়।
- ছোট দলের সুযোগ: এই পদ্ধতিতে ছোট দল বা সংখ্যালঘু মতামতের দলগুলোরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থাকে, যা সাধারণ "ফাস্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট" পদ্ধতিতে প্রায় অসম্ভব।
- ভোট নষ্ট হয় না: ভোটাররা মনে করেন না যে তাদের ভোট নষ্ট হয়েছে। কারণ, কোনো আসনে তাদের প্রার্থী হেরে গেলেও, তাদের ভোটটি দলের মোট ভোটের সাথে যোগ হয় এবং আসন পেতে সাহায্য করে।
প্রধান অসুবিধা:
- জোট সরকার: এই পদ্ধতিতে প্রায়শই কোনো একক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫০% এর বেশি আসন) পায় না। ফলে, সরকার গঠনের জন্য একাধিক দলকে মিলে "জোট সরকার" (Coalition Government) গঠন করতে হয়। অনেকে মনে করেন, জোট সরকার কিছুটা অস্থিতিশীল হতে পারে।
- জটিলতা: এই পদ্ধতিটি সাধারণ ভোটিং পদ্ধতির চেয়ে কিছুটা জটিল হতে পারে।
- সরাসরি জবাবদিহিতা: কিছু পি আর সিস্টেমে, ভোটাররা সরাসরি প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে দলকে ভোট দেন। এতে প্রার্থীর সাথে তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের সরাসরি যোগাযোগ বা জবাবদিহিতা কিছুটা কমে যেতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশ, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে (যেমন- জার্মানি, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড) সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে এই পি আর পদ্ধতি চালু আছে।
"লিস্ট পি আর" (List PR) বা তালিকাভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হলো পি আর (PR) পদ্ধতির সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত ধরণ।
এই পদ্ধতিতে, ভোটাররা কোনো একক প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে একটি রাজনৈতিক দলকে ভোট দেন। প্রতিটি দল নির্বাচনের আগে তাদের প্রার্থীদের একটি তালিকা (List) জমা দেয়।
এটি যেভাবে কাজ করে:
১. দলীয় তালিকা: নির্বাচনের আগে প্রতিটি দল তাদের প্রার্থীদের একটি অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করে (যেমন, ১ নং প্রার্থী, ২ নং প্রার্থী, ৩ নং প্রার্থী... এভাবে)।
২. দলকে ভোট: ভোটাররা ব্যালট পেপারে বিভিন্ন দলের প্রতীকে ভোট দেন।
৩. আসন বন্টন: নির্বাচন শেষে প্রতিটি দল মোট ভোটের কত শতাংশ পেলো তা গণনা করা হয়।
৪. তালিকা থেকে নির্বাচন: একটি দল যে কয়টি আসন পায়, সেই আসনগুলো তাদের জমাকৃত তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হয়।
উদাহরণ:
ধরুন, একটি নির্বাচনে ১০০টি আসন রয়েছে এবং 'ক' দল ২০% ভোট পেয়ে মোট ২০টি আসন জিতেছে।
এখন, 'ক' দল নির্বাচনের আগে যে ১০০ জন প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছিল, সেই তালিকার প্রথম ২০ জন প্রার্থী (১ নং থেকে ২০ নং পর্যন্ত) স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন।
লিস্ট পি আর (List PR) এর দুটি প্রধান ধরণ রয়েছে:
১. বন্ধ তালিকা (Closed List PR)
- এটি কী: এটিই সবচেয়ে সরল ধরণ। এখানে, দল যে তালিকা জমা দেয়, ভোটাররা তার কোনো পরিবর্তন করতে পারেন না। ভোটার শুধু দলকে ভোট দিতে পারেন।
- উদাহরণ: উপরের উদাহরণটি একটি "বন্ধ তালিকা"র উদাহরণ। দলটি যদি ২০টি আসন পায়, তবে তালিকার প্রথম ২০ জনই নির্বাচিত হবেন। তালিকার ২১ নম্বর প্রার্থীর কোনো সুযোগ থাকবে না, এমনকি তিনি খুব জনপ্রিয় হলেও।
- সুবিধা: দলটি সুশৃঙ্খলভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের (বিশেষজ্ঞ, নারী, বা সংখ্যালঘু প্রতিনিধি) সংসদে পাঠাতে পারে।
- অসুবিধা: ভোটারদের সরাসরি প্রার্থী পছন্দের কোনো সুযোগ থাকে না। দলের হাতে সব ক্ষমতা থাকে।
২. খোলা তালিকা (Open List PR)
- এটি কী: এই পদ্ধতিতে ভোটারদের ক্ষমতা কিছুটা বেশি থাকে। ভোটাররা শুধু দলকে ভোট দেন না, পাশাপাশি সেই দলের তালিকার মধ্যে থেকেও তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারেন (অনেকটা 'পছন্দক্রম' দেওয়ার মতো)।
- উদাহরণ: ধরুন, 'খ' দল মোট ১০টি আসন জিতেছে। কিন্তু ভোটাররা ভোট দেওয়ার সময় 'খ' দলের তালিকার ৫২ নম্বর প্রার্থীকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছেন।
- ফলাফল ঘোষণার সময় দেখা হবে, 'খ' দলের কোন ১০ জন প্রার্থী ভোটারদের কাছে সবচেয়ে বেশি 'পছন্দ' পেয়েছেন। সেই ১০ জনই নির্বাচিত হবেন—এমনকি তারা মূল তালিকার যত নম্বরেই থাকুন না কেন।
- সুবিধা: ভোটাররা প্রার্থী নির্বাচনে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারেন।
- অসুবিধা: এটি গণনা করতে কিছুটা জটিল এবং প্রার্থীরা দলের চেয়ে নিজেদের প্রচারণায় বেশি ব্যস্ত থাকতে পারেন।



















