পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে জুলাই শহীদ ও গণঅভ্যুত্থান দিবসের স্মরণে বিশেষ গ্রাফিতি অঙ্কন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, যা শিল্পের মাধ্যমে জাতির সংগ্রামী ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবে।
বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থান একটি চিরস্মরণীয় অধ্যায়। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বীর শহীদ ও জনগণের আত্মত্যাগ আজও জাতিকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। এই মহিমান্বিত স্মৃতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ধরে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বিশেষ গ্রাফিতি অঙ্কনের কাজ শুরু হয়েছে, যা শিল্পের মাধ্যমে ইতিহাসের বীরত্বগাথাকে জীবন্ত করে তুলবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা শিকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই উদ্যোগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তাঁর নির্দেশনায় সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের ম্যুরালে এমন সব শিল্পকর্ম আঁকছে, যা শুধু সৌন্দর্যের সংযোজন নয়—বরং জাতির সংগ্রামী অতীতকে নতুন প্রজন্মের কাছে প্রাণবন্তভাবে পৌঁছে দেওয়ার এক অনন্য প্রচেষ্টা।
এতে আরও বলা হয়েছে, এই গ্রাফিতি শিল্পকর্মে জুলাই বিপ্লবের বীরত্ব, আত্মত্যাগ ও গণতান্ত্রিক চেতনা সেতুর স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মিশে গিয়ে এক অনন্য ইতিহাসবাহী শিল্পরূপে রূপ নিচ্ছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ অবকাঠামো পদ্মা সেতুর পটভূমিতে এই চিত্রকর্ম জাতীয় স্মৃতি ও নান্দনিকতাকে একইসঙ্গে ধারণ করবে।
গত ৭ আগস্ট গ্রাফিতি অঙ্কনের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ। তিনি সরেজমিনে কাজের তদারকি করেন এবং শিল্পীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেন শেখ, প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস, সেতু কর্তৃপক্ষের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পরিদর্শন শেষে সচিব বলেন, “জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও শহীদের আত্মত্যাগ জাতির চিরন্তন সম্পদ। পদ্মা সেতুর এই গ্রাফিতি কাজ সেই গৌরবগাঁথা ইতিহাসকে শিল্পের মাধ্যমে ধারণ করেছে, যা ইতিহাস ও নান্দনিকতার এক অসাধারণ সংমিশ্রণ।”
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, এই শিল্পকর্ম শুধু শিল্পপ্রেমীদের মন জয় করবে না, বরং জাতির অন্তরে নতুন প্রেরণা সঞ্চার করবে। পাশাপাশি, মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসকে আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরবে এই গ্রাফিতি। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে অবস্থিত এই চিত্রকর্ম দর্শনার্থীদের জন্য হবে এক অনন্য আকর্ষণ, যা একইসঙ্গে শিক্ষামূলক ও অনুপ্রেরণাদায়ক।
এই উদ্যোগ কেবল একটি শিল্প প্রকল্প নয়—এটি জাতির বীরত্বের কাহিনি, শহীদের আত্মত্যাগ, এবং গণতন্ত্রের জন্য নিরলস সংগ্রামের এক জীবন্ত দলিল। পদ্মা সেতুর মতো জাতীয় উন্নয়নের প্রতীকী স্থাপনার সঙ্গে ইতিহাসের এই গৌরবময় অধ্যায়ের মেলবন্ধন বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে নতুনভাবে উপস্থাপন করবে।