২০২৬ সালের পবিত্র রমজান মাস শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি। তবে চূড়ান্ত ঘোষণা হবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে। বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
বছর ঘুরে আবারো ফিরে আসছে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মহান মাস, পবিত্র রমজান। সারা বিশ্বের শতকোটি মুসলমান এই মাসে রোজা পালন করে, নামাজ ও ইবাদতে মগ্ন হয় এবং দান-খয়রাত ও সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। এই মাস মুসলমানদের জন্য শুধু ইবাদতের সময় নয়, বরং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার, পরিবারকে আরও ঘনিষ্ঠ করার এবং মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য ছড়িয়ে দেওয়ার এক বিশেষ সুযোগও বটে।
সোমবার প্রকাশিত গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জ্যোতির্বিদদের হিসেবে ২০২৬ সালের রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি। প্রতিবেদনে বলা হয়, আরব বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এর আগের দিন সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদ দেখা যেতে পারে। তবে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী, রমজান শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে কেবল চাঁদ দেখা সাপেক্ষে। সাধারণত আরবি মাস শাবানের ২৯তম দিনে নতুন চাঁদ দেখার প্রস্তুতি নেওয়া হয় এবং এর ওপর নির্ভর করে রমজানের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।
প্রত্যেক দেশেই চাঁদ দেখা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ অথবা সংশ্লিষ্ট ধর্মবিষয়ক দপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে রমজান মাস শুরু ও শেষের ঘোষণা দিয়ে থাকে। ইসলামিক ক্যালেন্ডার বা হিজরি বর্ষপঞ্জি মূলত চন্দ্রচক্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এজন্য প্রতিটি মাস শুরু হয় নতুন অর্ধচন্দ্র দেখার মাধ্যমে এবং শেষ হয় একইভাবে।
চন্দ্র মাসগুলো সৌর মাসের তুলনায় তুলনামূলকভাবে ছোট হওয়ায় প্রতি বছর ইসলামিক মাসগুলো ইংরেজি ক্যালেন্ডারের হিসেবে ১০ থেকে ১১ দিন করে পিছিয়ে যায়। ফলে মুসলমানরা রমজান মাসকে কখনো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে, কখনো শীতের কনকনে ঠান্ডায়, আবার কখনো বর্ষা কিংবা বসন্তে পালন করার সুযোগ পান। এর ফলে মুসলমানরা ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়া ও পরিবেশে রোজার অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকেন।
রমজান মাসের তাৎপর্য মুসলমানদের জীবনে অত্যন্ত গভীর। রোজা শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা থেকে বিরত থাকার নাম নয়; বরং এটি আত্মসংযম, সহিষ্ণুতা এবং আত্মশুদ্ধির এক মহান অনুশীলন। এ মাসে মুসলমানরা ভোগ-বিলাস থেকে দূরে থেকে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ ও দোয়া-দরুদে মগ্ন থাকে। পাশাপাশি দান-খয়রাত ও গরিব-অসহায়দের সহায়তা করা হয় রমজানের অন্যতম প্রধান দিক।
এছাড়া রমজান মাসে মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যে সেহরি ও ইফতারের সময় বিশেষ আনন্দ-উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলেমিশে খাওয়াদাওয়া করা, একসঙ্গে নামাজ পড়া এবং প্রতিবেশীদের জন্য ইফতার পৌঁছে দেওয়ার মতো কাজগুলো মুসলিম সমাজে ভালোবাসা ও সহমর্মিতার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
ইসলামি জ্যোতির্বিদরা বলছেন, যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভাব্য তারিখ অনুমান করা যায়, তবুও শরীয়াহ অনুযায়ী রমজান শুরু ও শেষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করে চাঁদ দেখার ওপর। এজন্য মুসলিম বিশ্বে প্রতিটি দেশ শাবান মাসের শেষ দিন সূর্যাস্তের পর আকাশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রমজানের শুরুর তারিখ নির্ধারণ করে থাকে।
২০২৬ সালের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ১৭ ফেব্রুয়ারি ধরা হলেও, মুসলমানরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে চাঁদ দেখার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য। সেই মুহূর্তেই শুরু হবে এক মাসব্যাপী পবিত্র রমজানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা, যা মুসলমানদের জন্য আনবে নতুন প্রেরণা, নতুন আশা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অসীম সুযোগ।