এখন থেকে প্রবাসীরা পাসপোর্ট ছাড়াই জন্মনিবন্ধন সনদ, ছবি ও তিনজন এনআইডিধারী প্রবাসীর প্রত্যয়নপত্র জমা দিয়ে ভোটার হতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন নতুন নির্দেশনায় এই শর্ত শিথিল করেছে।
বাংলাদেশের প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরেই ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা ও শর্তের মুখোমুখি হয়ে আসছিলেন। বিশেষ করে পাসপোর্ট ছাড়া ভোটার নিবন্ধনের সুযোগ না থাকায় অনেক প্রবাসী নাগরিক ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারছিলেন না। এবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রবাসীদের জন্য সেই শর্ত সহজ করেছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) ইসির এনআইডি অনুবিভাগ থেকে প্রেরিত সংশোধিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)-তে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেন এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) খান আবি শাহানুর খান। সংশোধিত নির্দেশনার ফলে এখন থেকে প্রবাসীরা পাসপোর্ট ছাড়াই ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন।
নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, যদি কোনো প্রবাসীর পাসপোর্ট না থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থানরত তিনজন এনআইডিধারী প্রবাসীর প্রত্যয়নপত্র জমা দিলেই ভোটার হওয়া সম্ভব হবে। এর সঙ্গে জমা দিতে হবে অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র ফরম-২(ক); চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৬টি বিশেষ এলাকায় অন্তর্ভুক্ত উপজেলা ও থানার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসংবলিত ফরম; বাংলাদেশি জন্মনিবন্ধন সনদের অনলাইন ভেরিফায়েড কপি; একটি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি; এবং প্রয়োজনে পাসপোর্ট কপি অথবা তিন এনআইডিধারী প্রবাসীর প্রত্যয়নপত্র।
এছাড়াও আরও কিছু প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—আবেদনকারীর পিতা-মাতার এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা টিন সনদ, প্রয়োজনে বিয়ে সনদ ও স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি, কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যানের দেওয়া নাগরিকত্ব সনদ, এবং ইউটিলিটি বিল বা হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদের কপি। এসব কাগজপত্র সরাসরি নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে। তবে আবেদনকারীর পক্ষে বাংলাদেশে অবস্থানরত কোনো প্রতিনিধি চাইলে সেগুলো উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারের কাছেও জমা দিতে পারবেন।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইতালি, কুয়েত, কাতার ও মালয়েশিয়ার ১৬টি দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইসির তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই এসব দেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের সংশোধিত এই নির্দেশনা কার্যকর হলে আরও বিপুলসংখ্যক প্রবাসী ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধন করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রেখে আসলেও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে নানা ধরনের জটিলতা ছিল। এবার পাসপোর্ট ছাড়াই ভোটার হওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় প্রবাসী সম্প্রদায় আনন্দিত। অনেক প্রবাসী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “এটি আমাদের নাগরিক অধিকার আদায়ে একটি বড় অগ্রগতি।”
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই পদক্ষেপে প্রবাসীদের সঙ্গে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার যোগসূত্র আরও মজবুত হবে। একইসঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারবেন।
সবশেষে বলা যায়, পাসপোর্ট ছাড়াই ভোটার হওয়ার সুযোগ শুধু প্রবাসী নাগরিকদের জন্য একটি স্বস্তির খবরই নয়, বরং দেশের গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকারের দিক থেকেও এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।