ভারত যদি সিন্ধু নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে কঠিন জবাব পাবে—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানের এক ফোঁটা পানিও কেড়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
পানি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের পুরনো বিরোধ আবারও চরমে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন—ভারত যতই চেষ্টা করুক না কেন, পাকিস্তানের এক ফোঁটা পানিও কেড়ে নিতে পারবে না। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি নয়াদিল্লিকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমাদের পানি বন্ধের হুমকি দিলে মনে রেখো—পাকিস্তান তোমাদের এমন শিক্ষা দেবে, যা আজীবন মনে থাকবে।”
শাহবাজ শরিফ আরও বলেন, “যদি তোমরা এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে চাও, তবে প্রস্তুত থেকো কঠিন জবাবের জন্য। এমন শিক্ষা দেওয়া হবে যে, কান ধরে দাঁড়াতে হবে।” তার এই মন্তব্য পাকিস্তানের ভেতরে ও বাইরে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই বিতর্কের সূত্রপাত এ বছরের এপ্রিল মাসে। তখন ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং দীর্ঘদিনের সিন্ধু নদী চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের পানি বণ্টনের অন্যতম ভিত্তি। পাকিস্তান ভারতের এই পদক্ষেপকে “যুদ্ধ ঘোষণার শামিল” আখ্যা দিয়ে জানায়—চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করার কোনো বিধান নেই, বরং এটি ১৯৬৯ সালের ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করে।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন চলতি বছরের জুনে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত স্থায়ী সালিশি আদালত (পিসিএ) রায়ে জানায়—ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত রাখতে পারবে না। আদালত স্পষ্ট করে দেয়, পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর পানি অবাধভাবে পাকিস্তানের ব্যবহারের জন্য প্রবাহিত রাখতে হবে। কিন্তু ভারত পিসিএর এখতিয়ার স্বীকার করেনি এবং রায় মানতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একের পর এক কড়া প্রতিক্রিয়া আসছে। এর আগে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন—সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করা মানে সিন্ধু সভ্যতার ওপর সরাসরি আক্রমণ। তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়, পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করবে।”
একই সুরে কথা বলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরও। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে তিনি স্পষ্ট করে বলেন—ভারত যদি সিন্ধু নদীর পানি বন্ধের চেষ্টা করে, পাকিস্তান কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না। প্রয়োজনে বিতর্কিত বাঁধ ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
সিন্ধু নদ চুক্তি নিয়ে দুই দেশের এই বিরোধ দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পানি নিয়ে এ বিরোধ সীমান্ত উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের পথ খুলে দেবে।