‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লেখায় টাকা-ফ্ল্যাট লেনদেনের অভিযোগ, গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু দুদকের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Fresh controversy surrounds Bangabandhu’s “Unfinished Memoirs” as ACC launches probe into allegations of cash and flat transactions involving ex-IGP Javed Patwary and 123 others.

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক বহুল আলোচিত বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এখন নতুন করে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বইটি লেখার আড়ালে হয়েছে টাকা ও ফ্ল্যাট লেনদেনের বাণিজ্য। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারীসহ মোট ১২৩ জনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রবিবার (১৭ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত হাতে আসার পরেই কমিশন বিশেষ গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করেছে।

২০১২ সালে প্রকাশিত হয় শেখ মুজিবুর রহমানের বহুল আলোচিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা চারটি খাতা থেকে সম্পাদনা ও সংশোধনের পরই বইটি প্রকাশ করা হয়। বইটিতে উঠে আসে পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি শাসকদের নানা চক্রান্তসহ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা।

প্রকাশের পর থেকেই বইটি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। নিজ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা প্রায়ই এই বই থেকে উদ্ধৃতি দিতেন এবং বলতেন— বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

কিন্তু সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে ভিন্ন তথ্য উঠে আসে। সেখানে দাবি করা হয়, এই বইটি প্রকৃত অর্থে লিখেছেন তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে গঠিত শতাধিক সদস্যের একটি বিশেষ দল। অভিযোগ অনুযায়ী, শুধু লেখালেখি নয়, পুরো প্রক্রিয়া তদারকির বিনিময়েও সরকারি পদ, নগদ অর্থ ও বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্টদের।

এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন শুরু হয়। সমালোচকরা বলছেন, যেটি জাতির ইতিহাসের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা, সেটি যদি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার হয়ে থাকে তবে তা জাতির সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, “আমরা অভিযোগগুলো গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা টিম মাঠে নেমেছে। কারা কীভাবে এই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল, কারা সুবিধা নিয়েছে— সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।”

তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আর্থিক লেনদেন, সম্পদ বৃদ্ধি এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকেও তথ্য আনার পদক্ষেপ নেবে দুদক।

এ ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বিষয়টি নিয়ে নীরবতা বজায় রাখলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করছে, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ আসলে এক বিশাল প্রহসনের ফল। তাদের মতে, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা অগ্রহণযোগ্য। তারা মনে করে, বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও হতে পারে।

জাতির কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবনবৃত্তান্ত শুধু একটি বই নয়, বরং ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। তাই এই বইকে ঘিরে যদি দুর্নীতির মতো অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তা জাতির স্মৃতির ভান্ডারে এক অমোচনীয় দাগ হয়ে থাকবে। তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে শেষ হলে সত্য প্রকাশ পাবে বলে প্রত্যাশা করছেন সচেতন মহল।

No comments found