ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে বামপন্থী তিন ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে ‘অপরাজেয় ৭১ ও অদম্য ২৪’ নামে ১৫ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো এক নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। আজ দুপুরে মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ একটি প্যানেল। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল—এই তিন সংগঠন একত্রিত হয়ে ‘অপরাজেয় ৭১ ও অদম্য ২৪’ নামে ১৫ সদস্যের সমন্বিত প্যানেল উন্মোচন করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা জানান, এই প্যানেল কেবলমাত্র একটি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতীক। তারা উল্লেখ করেন যে, ডাকসু নির্বাচন দীর্ঘদিন পর হতে যাচ্ছে, তাই এ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রসমাজের প্রকৃত নেতৃত্ব উঠে আসা অত্যন্ত জরুরি।
ঘোষিত প্যানেলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রয়েছেন—ভিপি (সভাপতি) পদে নাঈম হাসান হৃদয়, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে এনামুল হাসান অনয় এবং এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদে অদিতি ইসলাম। বাকি সদস্যদের নাম ধাপে ধাপে ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার মূলত এ প্যানেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।
বাম সংগঠনগুলোর নেতারা আরও বলেন, বিগত সময়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বিভক্তি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তারা চাইছেন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শক্তিশালী বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করতে, যারা ভোগান্তি নয় বরং অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব দেবে। তাদের মতে, ‘অপরাজেয় ৭১’ মুক্তিযুদ্ধের অদম্য চেতনার প্রতীক আর ‘অদম্য ২৪’ বর্তমান প্রজন্মের সংগ্রামী মানসিকতার প্রতিচ্ছবি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তারা জানান, তাদের মূল অঙ্গীকার হলো—ছাত্রদের একাডেমিক স্বার্থ রক্ষা, হলগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা। তারা জোর দিয়ে বলেন, ডাকসু নির্বাচন যেন কোনো রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে না যায়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত স্বার্থের প্রতিফলন ঘটায়।
এদিকে প্যানেল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে নতুন করে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর এই ঐক্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। দীর্ঘ সময় পর ডাকসু নির্বাচনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ মূল নির্বাচনী লড়াইকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলবে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, ডাকসু নির্বাচনে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ উপস্থিতি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। কারণ, অতীতে বিভক্ত হয়ে তারা নিজেদের শক্তি হারিয়েছিল, কিন্তু এবার একসাথে এসে তারা নতুন এক বার্তা দিল। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
সবমিলিয়ে বলা যায়, ‘অপরাজেয় ৭১ ও অদম্য ২৪’ প্যানেল ঘোষণার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে এবং প্রকৃত নেতৃত্ব উঠে আসবে, যারা শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য লড়াই করবে।