গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিপ্লবের চেতনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে এবং জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতারণা করেছে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের স্বপ্ন মানুষ দেখেছিল, তা বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি। বরং বর্তমান সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে রাশেদ খান এই মন্তব্য করেন। তিনি পোস্টে লেখেন, “আজ ৮ আগস্ট, বিপ্লব বেহাত দিবস! গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের যে স্বপ্ন ছিল, সেটির কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। অন্তত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটলে দেশের মানুষ আজীবন এই সরকারকে মনে রাখত। কিন্তু তারা সেই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কোনো মনোযোগ দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নেও তারা সফল হতে পারেনি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিপ্লবের পর যে আচরণ ও নীতি সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল, বাস্তবে তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্রই দেখা গেছে। শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার পরিবর্তে কেবল ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার উপদেষ্টাদের নেতৃত্বে নতুন একটি সেটআপ বসানো হয়েছে, কিন্তু কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হয়নি।
রাশেদ খানের অভিযোগ, নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতার কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি বর্তমান সরকার। সচিবালয়, স্থানীয় প্রশাসনসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র আওয়ামী লীগের প্রভাব ও সেটআপ বহাল রয়েছে। পাশাপাশি ঘুষ ও দুর্নীতিও আগের মতোই চলছে, যা গণমানুষের জন্য হতাশাজনক।
তিনি লেখেন, “দৃশ্যমান কোনো সংস্কার আমরা দেখিনি। জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠিত না হওয়ায় পুরো বিপ্লবটাই হাতছাড়া হয়ে গেছে। জনগণ এখন বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের স্বপ্নও দেখছে না। বরং মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি করেছে।”
রাশেদ খান আরও প্রশ্ন তোলেন, সরকার কি এক বছরের কাজের হিসাব জনগণের কাছে প্রকাশ করবে? তাঁর দাবি, ক্ষমতায় আসার পর তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রতি মাসে কাজের হিসাব দেবে, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আজও রক্ষা হয়নি। “এক বছরের হানিমুন পিরিয়ড শেষে তারা এখন দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে। কিন্তু সেই সময়ের অর্জন ও কাজের ব্যাখ্যা কি তারা দেবে?”—এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশেদ খানের এই মন্তব্য কেবল সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়েই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে বিপ্লব-পরবর্তী প্রত্যাশা ভঙ্গের প্রতিফলন। জনগণ যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং মৌলিক সেবার উন্নয়ন আশা করেছিল, সেখানে একই প্রশাসনিক কাঠামো, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব বজায় থাকায় হতাশা তৈরি হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে এই সমালোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে এ ধরনের প্রকাশ্য অভিযোগ রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।