close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরেও নিয়ন্ত্রণ আসেনি বাজারে

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Even after one year of the interim government, Bangladesh’s markets remain unstable. Prices of essentials are soaring daily, leaving consumers desperate for relief.

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাজার। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে, ভোক্তারা বলছেন—‘স্বস্তির বাজার কবে আসবে?’

চলতি আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছর পূর্ণ হলো। গত বছরের ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার পতনের পর দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ নতুন আশায় বুক বাঁধে। ধারণা করা হয়েছিল, নতুন সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমিয়ে স্বস্তি দেবে, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আনবে এবং প্রশাসনিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু এক বছরের মাথায় সেই প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ নেয়নি। বাজার নিয়ন্ত্রণহীন থেকে গেছে, বরং পণ্যের দাম বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সবজির দাম গত বছরের তুলনায় এখন বেশি। এক কেজি ভারতীয় টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়, যেখানে গত বছর ছিল ১৩০ টাকা। কালো গোল বেগুনের দাম ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, যা গত বছর ছিল মাত্র ১২০ টাকা। শসা, ঢেঁড়স, উচ্ছে, করলা, কচুর লতি—সবকিছুর দামই ২০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। ধনেপাতা কেজিপ্রতি ২০০ টাকার পরিবর্তে এখন ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শুধু সবজি নয়, মাছ ও মাংসের বাজারেও একই চিত্র। ইলিশ, রুই, কাতল, চিংড়ি—সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে গড়ে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। গরুর মাংস প্রতি কেজিতে ৭৮০ টাকা, খাসি ১২০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় দাম সর্বত্রই উর্ধ্বমুখী।

ভোক্তারা বলছেন, নতুন সরকার আসার পর ভেবেছিলেন সবকিছু দ্রুত স্বাভাবিক হবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বেসরকারি চাকরিজীবী মাহফুজুর রহমান বলেন, “গত বছরের তুলনায় এই বছর বাজার আরও কঠিন হয়ে গেছে। মাসের অর্ধেক বেতন শুধু বাজার করতেই শেষ হয়ে যায়। পরিবার চালানো এখন দুঃস্বপ্নের মতো।”

অন্যদিকে আলু-পেঁয়াজ ও রসুন-আদার বাজারে তুলনামূলক স্বস্তি এসেছে। গেল বছরের আগস্টে যেখানে দেশি রসুন বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকায়, সেখানে এখন তা ১২০ টাকায় নেমেছে। একইভাবে চায়না আদা, চায়না রসুন, আলু-পেঁয়াজের দামও কমেছে ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন্যা ও সরবরাহ সংকটের কারণে পেঁয়াজের দাম আবারও কিছুটা বেড়েছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণ না আসার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল সমস্যা সুশাসনের অভাব। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান জানান, “কৃষকরা অনেক সময় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখেন ভালো দামের আশায়। এতে সরবরাহ কমে যায়, আর দাম বেড়ে যায়। এর সঙ্গে অসাধু ফরিয়ারা জড়িত থাকায় বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়।”

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। সিন্ডিকেট এখনও ভাঙা যায়নি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে। সরকারের উচিত এখনই ভর্তুকি দিয়ে হলেও দাম কমানো।”

একই সময়ে মুদি পণ্যের বাজারেও অস্থিরতা। চাল, ডাল, তেল, ঘি, চিনি, মশলার দাম ওঠানামা করছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকায়, যা গত বছর ছিল ১৬৭ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা, সরিষার তেল বেড়েছে ৩০ টাকা। এলাচি কেজিপ্রতি বেড়েছে ৬০০ টাকা, কালো গোল মরিচ বেড়েছে ১০০ টাকা।

ক্রেতারা বলছেন, এই বাজার পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিবার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। সরকারকে এখনই কঠোর বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে। না হলে জনমনে ক্ষোভ আরও বাড়তে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হলেও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি প্রমাণ করছে, নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ। প্রশ্ন এখন একটাই—সাধারণ মানুষের জন্য কবে আসবে স্বস্তির বাজার?

No comments found