close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

অন্তর্বর্তী সরকারের ১ বছর পূর্তি আজ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Under Professor Muhammad Yunus's leadership, the interim government completes its first year today. Discover how Bangladesh transformed after the fall of Sheikh Hasina’s regime.

অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আজ এক বছর পূর্ণ করল। শেখ হাসিনার পতনের পর বদলে যাওয়া বাংলাদেশে কী কী পরিবর্তন এসেছে, তা জানুন এই রিপোর্টে।

আজ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকে পা রাখছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই সরকার তার প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে, যা শুরু হয়েছিল এক অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, দীর্ঘ ৩৬ দিনের রক্তাক্ত আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। সেই অভ্যুত্থানে শহীদ হন শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। তিন দিন পর, ৮ আগস্ট, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় যা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করে।

এই সরকারের প্রথম বছরে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা দিতে সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানা রকম সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ৫ আগস্ট ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’ পালনের সময় সরকার জাতির সামনে উপস্থাপন করে 'জুলাই ঘোষণাপত্র'—যা দেশের ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্দেশ করে।

একইসঙ্গে 'জাতীয় ঐকমত্য কমিশন'-এর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর ‘জুলাই সনদ’-এর খসড়াও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ঘোষণা করেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের সময় রমজান মাসের আগে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে সব ধর্মপ্রাণ মুসলমান যেন স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ৬ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে এই তারিখ নিশ্চিত করা হয়।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং ঘোষণা দিয়েছে যে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল প্রকাশ করা হবে। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সরকার ও কমিশনের সমন্বয়ে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে।

সরকার একাধিক ‘সংস্কার কমিশন’ গঠন করেছে, যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে গভীর সংস্কারের সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকার এবং নারী বিষয়ক কমিশন। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার জনগণের আস্থা অর্জনে কাজ করছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। জুন মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত প্রায় তিন বছরে সর্বনিম্ন। প্রধান উপদেষ্টা জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে এই হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ভয়াবহ বন্যা ও কৃষি বিপর্যয়ের কারণে বাজার অস্থির হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। রমজান মাস থেকে বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থার ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ৩০৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা রপ্তানি আয়কে ৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে টাকার মান ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে। এমনকি বহু বছর পর দেখা গেছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়ছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, গত ১১ মাসে সরকার ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও সুদ পরিশোধ করেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। তবুও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, যা এই সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতাকে প্রতিফলিত করে।

এই এক বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসন এবং অর্থনীতি নতুন ধারায় প্রবেশ করেছে, যেখানে জনগণের মতামত, অংশগ্রহণ এবং স্বচ্ছতা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। এখন পুরো জাতি তাকিয়ে রয়েছে ২০২৬ সালের সেই নির্বাচনের দিকে—যেখানে জনগণ নতুন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

No comments found