শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা সম্ভব নয়। জটিল এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। তিনি জানান, এত বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, যা কেবলমাত্র একটি পূর্ণ মেয়াদী নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এবং শিক্ষক নেতারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বৈঠকে স্পষ্ট করে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে দেশের এত সংখ্যক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা সম্ভব নয়। এটি অত্যন্ত জটিল এবং রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল একটি বিষয়। নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই এ সিদ্ধান্ত নিতে ও বাস্তবায়ন করতে পারবে।”
তিনি আরও জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অন্য দাবিগুলো বিবেচনায় আনা যেতে পারে। বিশেষ করে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতার মতো আর্থিক সুবিধাগুলো ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। “যদি সবকিছু একসঙ্গে চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা সম্ভব হবে না। তবে ধীরে ধীরে শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে,” বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
বৈঠকে শিক্ষক নেতারা সর্বজনীন বদলি, বাড়িভাড়া এবং চিকিৎসাভাতা বৃদ্ধির দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন। তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষা উপদেষ্টা সর্বজনীন বদলির প্রক্রিয়া যাচাই করতে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। এছাড়া বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বর্তমানে দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাসে মাত্র এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা পান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করেছে বাড়িভাড়া আরও এক হাজার টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা এবং চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার জন্য।
শিক্ষকরা দাবি করছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও যেন ভাতার ক্ষেত্রে একই সুবিধা পান। সরকারি কর্মীরা ঢাকায় মূল বেতনের ৫০-৬৫ শতাংশ, জেলা শহরে ৪০-৬০ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকায় ৩৫-৫৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া পান।
এদিকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের ৬৪ জেলার কয়েক হাজার শিক্ষক অংশ নেন। সমাবেশের কারণে পল্টন থেকে হাইকোর্ট ও শাহবাগগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রথমে ঘোষণা ছিল সমাবেশ শেষে সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা করা হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করায় এবং উপদেষ্টার সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার পর শিক্ষকরা বিকেল ৩টার দিকে সমাবেশ শেষ করে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যান।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট ২৬ হাজার ৪৪৭টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার কর্মচারী।