বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাংগঠনিক অহমিকা বা ‘ইগো’ ঐকমত্যের পথে প্রধান বাধা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন একটি বৃহত্তর ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে, ঠিক সেই সময় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে বিদ্যমান ‘ইগো’ ঐকমত্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। মঞ্জুর এই বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক জোটগুলোর অভ্যন্তরীণ জটিলতাকেই সামনে নিয়ে এল।
মঞ্জু তার মন্তব্যে তিনটি দলের সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট এবং তাদের নিজস্ব অহমিকা বা ‘ইগো’ কীভাবে কাজ করছে, তার বিশ্লেষণ দেন। তিনি বলেন, বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় দল। তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে দীর্ঘ নির্যাতন সহ্য করেছে। “তাদের মতো অভিজ্ঞ দল দ্বিতীয়টি নেই। এটা তাদের ইগো,” বলেন মঞ্জু।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি সবচেয়ে সুসংগঠিত দল। চরম দমন-নিপীড়ন সহ্য করেও তারা রাজনীতি থেকে হাল ছাড়েনি। তার মতে, বর্তমানে জামায়াতের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বমুখী—এবং এটাই হলো জামায়াতের ‘ইগো’। এই অহমিকা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করছে।
মঞ্জু তার বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে এনসিপি'র নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরা ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের শীর্ষ হিরো। “তাদের আহ্বান ও নেতৃত্বেই ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পতন হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এটাও তাদের মধ্যে ইগোর জন্ম দিয়েছে,” বলেন এবি পার্টির এই নেতা।
মঞ্জু উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই তিন রাজনৈতিক দলকে বিভিন্ন সময়ে ‘বড় দল’, ‘সরকারের অংশ’ বা ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ দল’ হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। তার মতে, এই স্বীকৃতি পাওয়ার পর এখন এই তিন দলের ইগো সম্মিলিতভাবে ঐকমত্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দিতে পারে।
তিনি এই তিন রাজনৈতিক দলের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান। মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দলীয় ‘ইগো’ পরিহার করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা করা উচিত। তার মতে, জাতীয় সংকটের মুহূর্তে ব্যক্তিগত বা দলীয় অহমিকার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করাই একজন প্রকৃত নেতার পরিচয়।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এবি পার্টির পক্ষ থেকে দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সই করেন। এছাড়াও স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ জাহাঙ্গীর কাসেম, অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের জন্য সাংগঠনিক ইগো পরিহার করা এখন সময়ের দাবি, যা জাতীয় সংহতি ও ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।