পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বহুল আলোচিত সামরিক স্থাপনায় হামলার মামলায় জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে দুর্নীতি মামলার সাজা থাকায় তিনি এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না।
পাকিস্তানের বহুল আলোচিত রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নাটকীয় মোড় এসেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে অবশেষে জামিন দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে।
প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ লাহোর হাই কোর্টের দেয়া পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে ইমরান খানের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে হাই কোর্ট আটটি মামলায় তাঁর জামিন আবেদন খারিজ করেছিল, যা ইমরান খানের আইনজীবীরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলাফল বলে দাবি করেছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, অন্য কোনো মামলায় তাঁর উপস্থিতি প্রয়োজন না হলে জামিনের ভিত্তিতে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে। তবে আদালতের এই রায় সত্ত্বেও ৭২ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখনই স্বাধীনতা পাচ্ছেন না। কারণ দুর্নীতি মামলায় তিনি ইতোমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা ইমরান খানের বিরুদ্ধে বর্তমানে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ একাধিক মামলা চলছে। তিনি অবশ্য এসব অভিযোগকে বারবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছেন। তাঁর মতে, দেশের শীর্ষ সামরিক মহল এবং বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তাঁকে রাজনীতি থেকে সরাতে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে।
তবে ইমরান খানের মতো শুধু তিনিই নন, তাঁর দল পিটিআই-এর অনেক শীর্ষ নেতা এবং সংসদ সদস্যও সাম্প্রতিক সময়ে একই ধরনের মামলায় সাজা পেয়েছেন। এমনকি পার্লামেন্টের দুই কক্ষের বিরোধীদলীয় নেতাদেরও কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ফলে পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী শক্তি কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে দুর্নীতি মামলায় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য গ্রেপ্তার করার পর গোটা পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় রাওয়ালপিন্ডিতে সেনানিবাসের জেনারেল হেডকোয়ার্টারসহ একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়। সেনাবাহিনীর ঐতিহাসিক সীমানার ভেতরে এমন আক্রমণ পাকিস্তানের রাজনীতিতে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে এবং ইমরান খান ও তাঁর দলের ওপর আরও কঠোর অবস্থান নেয় সেনা ও সরকার।
আজকের রায়ের পর পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে। ইমরান খানের মুক্তি তাঁর দল ও সমর্থকদের জন্য বড় ধরনের স্বস্তি নিয়ে এলেও বাস্তবতা হলো, দুর্নীতি মামলার সাজা থাকায় তিনি আপাতত কারাগারে থেকেই যাবেন। এতে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত অবস্থায় ঝুলে রয়েছে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খান দীর্ঘদিন ধরেই এক বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা এখনও বিপুল, তবে সেনাবাহিনী ও সরকারের সঙ্গে সংঘাত তাঁকে ক্রমেই কোণঠাসা করেছে। সুপ্রিম কোর্টের এই জামিন রায় হয়তো তাঁর জন্য সাময়িক স্বস্তি, কিন্তু মুক্তি পাওয়া এবং পূর্ণ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন এখনও বড় প্রশ্ন হয়ে রয়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানকে ঘিরে পাকিস্তানের রাজনীতি আগামী দিনে আরও উত্তপ্ত হবে। জামিনের এই রায় তাঁর সমর্থকদের নতুন করে উজ্জীবিত করবে, তবে দুর্নীতি মামলার সাজা থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিক ময়দানে সরাসরি সক্রিয় হতে পারবেন না। আর এ কারণেই দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চয়তায় আবৃত।