close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

অভিজিৎ রায় হত্যা মামলা: যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ফারাবী জামিনে মুক্ত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Shafiur Rahman Farabi, sentenced to life in prison for the murder of writer-blogger Avijit Roy, has been released on bail. He walked out of Kashimpur High Security Prison on Friday morning, sparking f..

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিউর রহমান ফারাবী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে শুক্রবার সকালে তিনি বের হন, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিউর রহমান ফারাবী অবশেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার মুক্তির খবরে জনমনে বিস্ময় ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, কারণ দীর্ঘদিন ধরে এ মামলাটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার অন্যতম আলোচিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ফারাবী ২০২৩ সাল থেকে এ কারাগারে বন্দী ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালত থেকে তার জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র কারাগারে এসে পৌঁছায়। নিয়ম অনুযায়ী সব নথি যাচাই-বাছাই শেষে শুক্রবার সকালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার পরই তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার আন্দোলনে এক গভীর আঘাত হানে। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে বের হওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন এলাকায় তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ গুরুতর আহত হলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। এ হামলার পর বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল।

অভিজিৎ রায় ছিলেন মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখালেখির অন্যতম সাহসী কণ্ঠস্বর। তার মৃত্যু দেশের লেখক, পাঠক এবং প্রগতিশীল চিন্তার মানুষের কাছে এক অমোচনীয় ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত হয়। তার রচিত বই ও ব্লগে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে ধরায় তিনি চরমপন্থীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন।

ফারাবীর নাম এ মামলায় উঠে আসার পর থেকেই তিনি ছিলেন আলোচনায়। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় তাকে অন্যতম দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন, যা দেশের মুক্তচিন্তার পক্ষের মানুষদের কাছে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তার জামিনে মুক্তি পাওয়া আবারও সেই স্মৃতি উসকে দিয়েছে এবং বিচারব্যবস্থার কঠোরতা ও ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের জামিনের ফলে মুক্তচিন্তা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি হতে পারে। অনেকের আশঙ্কা, তার মুক্তি মৌলবাদী শক্তিকে নতুন করে উসকে দিতে পারে। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের প্রক্রিয়া মেনেই জামিন হয়েছে, তাই আইনি দিক থেকে এটি প্রশ্নবিদ্ধ নয়।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংস ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির জামিনে মুক্তি পাওয়া মুক্তচিন্তার ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি বিচারপ্রক্রিয়ার স্বাভাবিক ধাপ, এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত কাউকে চূড়ান্ত অপরাধী হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।

বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা, লেখক সমাজ ও সাধারণ মানুষ আবারও নতুন এক বিতর্কে দাঁড়িয়ে গেছে। অভিজিৎ রায় হত্যার পর দীর্ঘ ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রক্তাক্ত রাতের স্মৃতি এখনো অনেকের কাছে তাজা। আর যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিনে মুক্তি সেই ক্ষতকে নতুন করে উসকে দিয়েছে।

No comments found