বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নোংরামির সঙ্গে থাকতে না চাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে তৈরি হয়েছে তীব্র জটিলতা ও অস্থিরতা। দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিকেট অঙ্গনের শীর্ষ পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের লড়াই চললেও এবারের নির্বাচন ঘিরে সেই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেই জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং দেশের অন্যতম সফল ওপেনার তামিম ইকবাল নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
তামিম স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, তিনি নোংরামি ও অসুন্দর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান না। তাই স্বেচ্ছায় এ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার মতে, ক্রিকেটের স্বার্থে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটির ঘাটতি স্পষ্ট।
বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আগামী ৬ অক্টোবর। এর আগে বুধবার, ১ অক্টোবর ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়সীমা। সেদিনই তামিম তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। শুধু তিনিই নন, তার নেতৃত্বে থাকা আরও বেশ কিছু ক্লাবও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। ফলে এক ঝটকায় ভোটযুদ্ধের চিত্র পাল্টে যায়।
এদিকে, হাইকোর্টের এক নির্দেশনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে জড়িত ১৫টি ক্লাবকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত আসে। এই রায় ঘোষণার পরপরই ক্রিকেট মহলে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। খবর চাউর হয়, তামিমের নেতৃত্বাধীন অন্তত ১২-১৩টি ক্লাব সমঝোতা না হলে রাতারাতি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে। অবশেষে সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।
তামিমের এই সিদ্ধান্ত দেশের ক্রিকেটে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকের মতে, এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নির্বাচন হওয়া উচিত ন্যায্য ও সুষ্ঠুভাবে, যেখানে খেলোয়াড়দের বিশ্বাসযোগ্যতা অক্ষুণ্ণ থাকে। অথচ এখন দলীয় স্বার্থ ও প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দ্বে মূল লক্ষ্য—বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়ন—পিছিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, তামিমের ভক্ত ও সমর্থকরা তার এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের দাবি, তামিম বরাবরই ক্রিকেটের স্বার্থে স্পষ্টবাদী এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন। এবারও তিনি সেটিরই প্রমাণ দিলেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এ ধরনের পরিস্থিতি নতুন নয়। অতীতেও বিসিবি নির্বাচনে রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। তবে তামিম ইকবালের মতো বড় তারকার সরাসরি সরে দাঁড়ানো ক্রিকেটাঙ্গনে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতে ক্রিকেট বোর্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে আরও বড় প্রশ্ন তৈরি করবে।
বর্তমানে সবার চোখ ৬ অক্টোবরের দিকে, যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে তামিমের অনুপস্থিতি ও বেশ কয়েকটি ক্লাবের সরে দাঁড়ানোয় নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের দর্শক ও সমর্থকরা আশা করছেন, বোর্ড নির্বাচন যেভাবেই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত যাতে ক্রিকেটের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকে এবং দেশের ক্রিকেটকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।