close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

নিউটনের সূত্র ভুল দাবি করলেন পঞ্চগড়ের আফসার

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Afsar Ali from Tetulia, Panchagarh, claims Newton’s third law is merely hypothetical. After 30 years of research, he presents an alternative explanation and potential for groundbreaking technology.

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আফসার আলী দাবি করেছেন, নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র বাস্তব নয়, বরং কেবল কাল্পনিক যুক্তি। দীর্ঘ ত্রিশ বছরের গবেষণায় তিনি বিকল্প ব্যাখ্যা ও নতুন প্রযুক্তির সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আফসার আলী (৬৫) এক অভাবনীয় দাবি তুলেছেন, যা প্রচলিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। তার বক্তব্য—স্যার আইজ্যাক নিউটনের প্রণীত তৃতীয় গতিসূত্র আসলে বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। যদিও প্রথম সূত্রকে তিনি আংশিক সঠিক এবং দ্বিতীয় সূত্রকে সম্পূর্ণ সঠিক বলে মনে করেন, তবে তৃতীয় সূত্রকে তিনি “কাল্পনিক যুক্তি” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

আফসার আলীর জীবনী বলছে, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) চাকরি শুরু করে তিনি ১৯৯৬ সালে ইঞ্জিন চলাচলের একটি নতুন সূত্র আবিষ্কারের দাবি করেন। তার মতে, যান্ত্রিক কৌশলের মাধ্যমে জড়ের জড়তা ধর্ম, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ামুখী বলকে একই দিকে নিয়ন্ত্রণ করে পর্যায়ক্রমে গতি ও স্থিতির রূপান্তর ঘটালে স্থায়ী গতি শক্তি বা স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদন সম্ভব।

নিউটনের প্রথম সূত্র নিয়ে তিনি বলেন—এতে বাহ্যিক বলের উৎস নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা নেই, ফলে এটি অসম্পূর্ণ। দ্বিতীয় সূত্র—যা ভরবেগের পরিবর্তনের হারকে প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক বলে—এটি সম্পূর্ণ সঠিক। কিন্তু তৃতীয় সূত্র—“প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া”—তার মতে, বাস্তব নয়। বরং তিনি প্রস্তাব করেন, প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি ঘর্ষণ, একটি বাধা এবং একটি প্রতিক্রিয়া থাকে। ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া সমান হলে বস্তু স্থির থাকে, আর বাধাহীন পথে চলমান বস্তু নিজের জড়তার কারণে চলতে থাকে।

নিজস্ব গবেষণার অংশ হিসেবে আফসার আলী একটি ইউ-আকৃতির সিলিন্ডার তৈরি করেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, এতে পানি ঢাললে ভেতরের বাতাস আটকে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করে। চাপ মুক্ত হওয়ার পর পানির পতনে শক্তি উৎপন্ন হয়। এই শক্তি দিয়ে তিনি জ্বালানি বা বিদ্যুৎ ছাড়াই ইঞ্জিন চালানোর সম্ভাবনা খুঁজছেন। এ লক্ষ্যে তিনি নিজের অর্থ খরচ করে একাধিক ছোট ডিজেল ইঞ্জিন কিনেছেন, যা করতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

প্রায় তিন দশক ধরে তার গবেষণা যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলেও, কোনো প্রতিষ্ঠানই তার দাবি পরীক্ষা করেনি। আফসার বিশ্বাস করেন—যদি তার আবিষ্কার প্রমাণিত হয়, তবে বিশ্বে নতুন প্রযুক্তির দুয়ার খুলে যেতে পারে।

১৯৭৫ সালে জগদল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে, ১৯৭৮ সালে ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে দুই বছরের কোর্স সম্পন্ন করেন তিনি। জীবনে বহু প্রবন্ধ ও বই লিখলেও আর্থিক ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে প্রকাশ করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি সরকারি সহযোগিতায় তার সূত্রের বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সুযোগ চান।

রকেটচালনা সম্পর্কেও তিনি ভিন্নমত পোষণ করেন। আফসারের মতে, রকেট প্রতিক্রিয়ার বলে নয়, বরং ভরবেগের কারণে চলে—যা নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। তার দাবি, তৃতীয় সূত্র কেবল তত্ত্ব, বাস্তবতা নয়।

স্থানীয় আজিজনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের পাশেই তার বাসা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিউটনের তৃতীয় সূত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। যদিও এটি আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম স্তম্ভ, তবুও বিজ্ঞান প্রমাণনির্ভর। প্রমাণ ছাড়া কোনো তত্ত্ব গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “যদি আফসার তার দাবির পক্ষে শক্ত প্রমাণ দিতে পারেন, তবে অবশ্যই তা বিবেচনার দাবি রাখে। যেহেতু তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাই সরকারি বা সামাজিক উদ্যোগে তাকে কিছুটা সুযোগ দেওয়া উচিত।”

আফসার আলীর গল্প শুধু বিজ্ঞান বিতর্ক নয়—এটি একজন মানুষের দৃঢ় মনোবল, অধ্যবসায় এবং নতুন কিছু করার অদম্য চেষ্টার প্রতিচ্ছবি। তার দাবি শেষ পর্যন্ত সত্য প্রমাণিত হোক বা না হোক, এমন প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকতে পারে।

No comments found