‘নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আওয়ামী লীগের হামলা’

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Bangladeshi Ambassador Mushfiqul Fazal Ansari strongly condemned the Awami League’s attack and vandalism at the New York Consulate. He urged the U.S. administration to take immediate action and ensure..

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা ও কূটনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।

নিউইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হামলার ঘটনায় নতুন করে উত্তপ্ত হলো প্রবাসী বাংলাদেশি অঙ্গন। অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কনস্যুলেটের ভেতরে অবস্থান করছেন এমন সন্দেহকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হয়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে কনস্যুলেটের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত করে তোলে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সামনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল করছে এবং স্লোগান দিচ্ছে। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, কনস্যুলেটের প্রধান দরজায় একাধিক ব্যক্তি জোরপূর্বক ধাক্কাধাক্কি করছে। এ অবস্থায় দ্রুতই নিউইয়র্ক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কনস্যুলেটের ভেতরে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে দেয়নি।

এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। সোমবার (২৫ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কিছু দুষ্কৃতিকারীর হামলা ও ভাঙচুর একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।”

তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশি কূটনীতিকরা এই বিষয়ে আমেরিকান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করবেন।

রাষ্ট্রদূত আনসারী আরও উল্লেখ করেন, বিদেশে অবস্থিত প্রতিটি বাংলাদেশি মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে, পতিত স্বৈরশাসকের অনুসারীদের এমন ন্যক্কারজনক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, বিশেষ করে জেনেভা কনভেনশন অনুসারে, স্বাগতিক দেশগুলোকে বিদেশি মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। ফলে, নিউইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্ব।

মুশফিকুল ফজল আনসারী, যিনি দীর্ঘদিন হোয়াইট হাউজ ও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন, আরও জানান, এ বিষয়ে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তিনি যে কোনো প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে প্রস্তুত আছেন।

এই হামলার পর প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করে বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা এখন বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। কূটনৈতিক নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় অনেকেই দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

ঘটনাটি শুধু বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের জন্যও উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, কোনো দেশের কনস্যুলেট বা দূতাবাসে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন এবং এর ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ভেতরে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারা নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়, সেটিই এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আলোচনার মূল বিষয়।

No comments found