নির্বাচনি প্রস্তুতির অগ্রযাত্রা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্তের পথে ইসি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নীরবে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন কমিশন এবং কমিটির মাধ্যমে ইতোমধ্যে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে নতুন নির্বাচনি আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং প্রাথমিক সময়সূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। ইসি সচিবালয় নির্বাচনকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সময়সীমাসহ রোডম্যাপের খসড়া তৈরি করেছে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও চূড়ান্ত প্রকাশ
ইসি জানিয়েছে, আগামী ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হবে। নতুন ভোটারদের তথ্য সংশোধন এবং ত্রুটি নিরসনের জন্য ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ভোটার তালিকা নিয়ে যেকোনো অভিযোগ বা আপত্তির আবেদন গ্রহণ করা হবে।
এরপর ৩০ জানুয়ারির মধ্যে ইসি আপত্তি নিষ্পত্তি করবে এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২ মার্চ প্রকাশ করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনি প্রক্রিয়ার এই দিকটি তদারক করছেন ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখা-২ এর সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী।
সংসদীয় আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি
নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন গত রবিবার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বৈঠক করেছে। কমিশনের আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এই বিষয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। একইসঙ্গে নির্বাচনি মালামাল কেনা থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
আইন ও বিধিমালা সংস্কার, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস, দক্ষতা উন্নয়ন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলোর প্রধানরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
নির্বাচনি রোডম্যাপ চূড়ান্তের পথে
নির্বাচন কমিশন একটি বিস্তারিত রোডম্যাপের খসড়া তৈরি করেছে, যেখানে তফসিল ঘোষণার আগের এবং পরবর্তী সকল কার্যক্রমের সময়সীমা নির্ধারণ থাকবে। কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনি মালামাল সংগ্রহ, ব্যালট পেপার ছাপানো, গেজেট প্রকাশসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো সময়মতো শেষ করতে এই রোডম্যাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসির সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) কাছে ব্যালট পেপারের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি উপজেলা ও সিটি নির্বাচনের জন্য হলুদ, নীল এবং গোলাপি রঙের কাগজে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়।
নির্বাচনি সংস্কার ও অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনা
নির্বাচন কমিশনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন,
"প্রস্তুতি তো থাকতেই হবে। আমরা চাই একটি সুন্দর এবং স্বচ্ছ নির্বাচন। গুরুত্ব অনুযায়ী কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।"
সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এবং প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেই নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-সহ অন্যান্য আইন ও বিধি সংশোধনের মাধ্যমে কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে।
নির্বাচন কমিশনের অগ্রাধিকার তালিকা:
১. আইন-বিধি সংস্কার।
২. ভোটার তালিকা হালনাগাদ।
৩. সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণ।
৪. নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন।
৫. বাজেট প্রস্তুতি।
৬. নির্বাচনি সামগ্রী সংগ্রহ।
চূড়ান্ত লক্ষ্য: একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন
ইসি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতিমূলক কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। সকল কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে রোডম্যাপ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে কাজ এগিয়ে চলেছে।
এতে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করাই ইসির চূড়ান্ত লক্ষ্য।
No comments found



















