আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে আনসার-ভিডিপি। অস্ত্র, পোশাক ও নিরাপত্তা সামগ্রী কেনার জন্য এই অর্থ প্রয়োজন বলে দাবি তাদের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক সংকটের সময়ে ব্যয়টি যৌক্তিকভাবে যাচাই করা জরুরি।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (আনসার-ভিডিপি) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য ৪৫০ কোটি টাকার একটি বিশাল বরাদ্দ চেয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, বাহিনীর এই প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য।
আনসার-ভিডিপির হিসাব অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রে তাদের সদস্যদের নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে হবে। সারা দেশে আনসার-ভিডিপির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। এই বিপুল সংখ্যক সদস্যদের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে অতিরিক্ত অস্ত্র, গোলাবারুদ, পোশাক এবং নিরাপত্তা সামগ্রী কেনার প্রয়োজন হবে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এসব কেনাকাটায় মোট ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা।
তবে এই প্রস্তাবটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতি ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমানে দেশের আর্থিক সংকটের সময় এমন বড় অঙ্কের বরাদ্দ অনুমোদনের আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করা জরুরি।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ আলী বলেন, “বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা খুবই জটিল। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হলো প্রয়োজনীয়তা ও স্বচ্ছতা। নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অর্থ দরকার, কিন্তু সেটা যেন অপচয়ে না গড়ায়।”
অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানীয় ফেলো, বলেন, “সরকারি অর্থ অপচয়ের অনেক নজির আমরা আগেও দেখেছি। অথচ এই অর্থ জনগণের করের টাকা, কিংবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঋণের দায় হিসেবে তাদের কাঁধে গিয়ে পড়ে। তাই ব্যয় অনুমোদনের আগে প্রতিটি খরচের যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা উচিত।”
বিশ্লেষকরা আরও মনে করেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। কারণ, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক দিক থেকেই নয়, আর্থিক দিক থেকেও দেশের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তারা বলেন, ৪৫০ কোটি টাকার প্রস্তাবটি যদি প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা যাচাই করে অনুমোদন করা হয়, তবে এটি নির্বাচনী নিরাপত্তা জোরদারে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু যদি ব্যয়ের হিসাব অস্পষ্ট বা অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় হয়, তাহলে তা জনঅসন্তোষ বাড়াতে পারে।
বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনায় রেখেছে বলে জানা গেছে। সিদ্ধান্তের আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ব্যয়ের বিস্তারিত বিবরণ ও যৌক্তিকতা উপস্থাপন করতে বলা হতে পারে।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা জোরদার অবশ্যই জরুরি, তবে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা আরও বেশি প্রয়োজন। কারণ, জনগণের করের টাকা ব্যয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্তই জনগণের বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।