পশ্চিমবঙ্গের আরামবাগে রাজনৈতিক সভায় সরাসরি প্রতিপক্ষকে পালটা আঘাতের আহ্বান জানালেন মিঠুন চক্রবর্তী। বিজেপির এই তারকা নেতা বলেন, “মার খেয়ে বাড়ি ফিরবেন না, পালটা মারুন।”
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা ছড়াল অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া মিঠুন চক্রবর্তীর বক্তব্যে। আরামবাগে এক রাজনৈতিক সভায় তিনি বলেন, “মার খেয়ে বাড়ি ফিরবেন না, পালটা দিন। পারলে মারবেন।” এই বক্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিঠুন সরাসরি রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। বলেন, “এই সরকার পুরোপুরি দুর্নীতিগ্রস্ত। নারীরা আজ এই রাজ্যে নিরাপদ নয়। ভোটার তালিকায় ভুয়া নাম ঢুকিয়ে গণতন্ত্রকে লুট করছে তৃণমূল।” তার মতে, সাধারণ মানুষের ন্যায্য ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে শাসকদল, আর সেই কারণেই প্রতিরোধ জরুরি।
তিনি আরও বলেন, “বিহারে ৫৬ লক্ষ ভুয়া ভোটারের নাম বাদ গেছে নির্বাচন কমিশনের তালিকা থেকে। তাহলে পশ্চিমবঙ্গেও তদন্ত হওয়া দরকার— কে কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে ভোটার হয়েছে, তা সরকারকে স্বীকার করতেই হবে।” এই বক্তব্যে কার্যত এনআরসি ও ভোটার যাচাইয়ের বার্তা দিলেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি এবার নির্বাচনের আগেই আক্রমণাত্মক প্রচারে নামছে। বিশেষ করে তারকাদের ব্যবহার করে রাজ্যের নানা প্রান্তে প্রচার জোরদার করছে তারা। মিঠুন চক্রবর্তীর মতো তারকাকে সামনে এনে দলটি জনসাধারণের মধ্যে জোরালো বার্তা ছড়াতে চাইছে। তবে মিঠুনের হঠাৎ "পালটা মারুন" ধরণের মন্তব্য রাজ্যের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশে উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে বলেই অনেকের আশঙ্কা।
তবে তৃণমূলও চুপ নেই। দলের প্রবীণ নেতা ও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেন, “মিঠুন চক্রবর্তী ভালো অভিনেতা হতে পারেন, কিন্তু রাজনীতিতে উনি পুরোপুরি জোকার। তৃণমূলের টিকিটে একসময় রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন, পরে ইডি-সিবিআইয়ের চাপে পদ ছেড়ে পালিয়েছেন। তার সঙ্গে বাংলার মাটির কোনো সংযোগই নেই।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মিঠুনের মন্তব্য শুধু তাৎক্ষণিক উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য নয়, বরং এটা বিজেপির একটা সুপরিকল্পিত কৌশল। রাজ্যজুড়ে জনসংযোগ বাড়ানো, সরকারের দুর্বলতা তুলে ধরা এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতিবাদ তৈরির জন্য তারকাদের ব্যবহারই এই মুহূর্তে বিজেপির প্রধান অস্ত্র।
মাঠের রাজনীতি উত্তপ্ত হচ্ছে, বক্তৃতার ভাষা আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছে— তার মধ্যেই মিঠুন চক্রবর্তীর বক্তব্য এক নতুন মাত্রা এনে দিল। পালটা আঘাতের আহ্বান রাজনীতিতে কতটা বাস্তব প্রতিফলন ঘটাবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।