চরমোনাই পীর স্পষ্ট জানিয়েছেন, জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ছাড়া দেশে আগের নিয়মে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। ছাত্র-জনতা এখনো রাজপথ ছাড়েনি বলেও তিনি সতর্ক করেন।
নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে—এমন জোরালো দাবি তুলেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কোনো অশুভ শক্তি যদি প্রধান উপদেষ্টাকে চাপ প্রয়োগ করে সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন ঘোষণা করাতে চায়, তাহলে দেশের ছাত্র-জনতা রাজপথ ছেড়ে যাবে না। আগের নিয়মে আর কোনো নির্বাচন এ দেশে হতে দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এই বক্তব্য দেন। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
চরমোনাই পীর তার বক্তব্যে বলেন, “দেশ যখন আগুনের মতো জ্বলছিল, তখন মানুষ অন্যায়, বৈষম্য ও খুনখারাবি থেকে মুক্তির জন্য রাজপথে নেমে এসেছিল। তারা বুকের রক্ত দিয়ে দেশকে উদ্ধার করেছে। সেই ত্যাগকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। জুলাই সনদ হলো সেই মুক্তির দলিল। তাই নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই এই সনদের আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “যদি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কার্যকর না হয় এবং বিচার দৃশ্যমান না হয়, তবে বাংলার মাটিতে আগের নিয়মে নির্বাচন হতে পারে না। আর আমরা তা কখনোই হতে দেব না। ছাত্র-জনতা এখনো রাজপথে আছে এবং প্রয়োজনে আবারো ত্যাগ স্বীকার করবে।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ। প্রধান অতিথি ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতেয়াজ আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাউয়ুম এবং সহ-প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক কেএম শরীয়াতুল্লাহ প্রমুখ।
বক্তারা সবাই একযোগে দাবি তোলেন—জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় আনতে হবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার। পাশাপাশি তারা পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান।
সভায় নেতারা অভিযোগ করেন, দেশের জনগণ আজও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। অশুভ শক্তি এখনো নানা কৌশলে সংস্কারের দাবিকে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ছাত্র-জনতা যে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন এনেছিল, সেই শক্তিকে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যদি জনগণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সনদের আইনি স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, তবে দেশ আবারো অস্থিরতার দিকে ধাবিত হবে।
সমাবেশে চরমোনাই পীর তার বক্তব্যের শেষাংশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। তবে জনগণের দাবি উপেক্ষা করা হলে, আগের মতোই বাংলার রাজপথ আবার উত্তপ্ত হবে। এ দেশে আর কোনো পাতানো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। জনগণের স্বার্থই আমাদের একমাত্র অঙ্গীকার।